Thursday, June 21, 2012

নতুন দিনের নতুন সম্ভাবনা : শক্তির বিকল্প উৎস

নতুন দিনের নতুন সম্ভাবনা : শক্তির বিকল্প উৎস

শক্তিই হচ্ছে মানব সভ্যতার প্রধান চালক। কিন্তু প্রচলিত শক্তির উৎসের সঞ্চয় খুবই সীমিত এবং মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে সঞ্চয় ভাণ্ডার ক্রমশই ফুরিয়ে যাচ্ছে। তাই আগামী প্রজন্মকে রক্ষার জন্য শক্তির নতুন উৎস সন্ধান খুবই জরুরি। বিজ্ঞানীরা এরই মধ্যে শক্তির বিকল্প উৎসের খোঁজে নানা গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেছেন। আগামী দিনের সম্ভাবনাময় এসব বিকল্প শক্তির উৎস নিয়ে এবারের বিজ্ঞানবিশ্ব আয়োজনটি সাজানো হয়েছে।

পারমাণবিক শক্তি

পারমাণবিক শক্তিকে বিদু্যৎ উৎপাদনের উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ছোট আকারের একটি পরমাণু কেন্দ্র হতে বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপাদন করা সম্ভব। মূলত নিউক্লিয়ার বিভাজন বা সংযোজন পদ্ধতিতে যে বিপুল তাপের উদ্ভব ঘটে, সেই পরিমাণ তাপকে পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ্রে পানির বাষ্পীভবনের কাজে লাগানো হয়। উত্তপ্ত বাষ্প বা স্টিম টারবাইনকে ঘোরায় এবং টারবাইন ঘোরার সঙ্গে সঙ্গে সংযুক্ত জেনারেটরও ঘুরতে শুরু করে। আর এর ফলে বিদু্যৎ উৎপন্ন করা যায়। তবে এ ব্যবস্থাটি যেমন জটিল ও ব্যয় সাপেক্ষ, তেমনি যেকোনো ধরনের অসাবধানতা পরিবেশকে মারাত্মকভাবে দূষিত করতে পারে।

স্রোত ও প্রবহমান পানি থেকে শক্তি

পানির স্রোত বা প্রবহমান পানি থেকে বিদু্যৎ উৎপাদন করা যায়। নদী, সাগর এমনকি জোয়ার-ভাটার স্রোতকে কাজে লাগিয়ে এবং খালের মতো কৃত্রিম জলপথে প্রবাহ তৈরি করে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদু্যৎ উৎপাদন করা সম্ভব। এতে কোনো ধরনের দূষণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

ঘরোয়া সৌরশক্তি

সূর্যই হচ্ছে সকল শক্তির উৎস। সৌরবিদু্যৎতন্ত্র তার ফটোভোল্টিক কোষের বিদু্যৎ শক্তিতে পরিণত করে। সোলার ওয়াটার হিটার যন্ত্রে পানি গরম করতে তাপ সংগ্রাহক প্যানেল ব্যবহার করা হয়। সৌরশক্তি অফুরন্ত, সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব এবং নবায়নযোগ্য। একটি উদাহরণের মাধ্যমে সৌরবিকিরণ থেকে প্রাপ্ত সৌরশক্তির বিপুল সম্ভাবনা বোঝানো যাবে। সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে এক বছরে যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হয়, তা বত্রিশ মিনিটে যে পরিমাণ সৌরবিকিরণ ঐ দেশে পড়ে, তার থেকে পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু সৌরবিকিরণে প্রাপ্ত সৌরশক্তিকে ব্যবহার উপযোগী করে তোলার উপযুক্ত প্রযুক্তি এখনও করায়ত্ব হয়নি। তবে উন্নত দেশগুলোতে সৌরশক্তিকে কিভাবে সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করা হচ্ছে।

সৌরখামার

সৌরখামার থেকে দুটি উপায়ে প্রচুর পরিমাণে বিদু্যৎ উৎপাদন করা সম্ভব। প্রথমত, সৌরতাপ পস্নান্টগুলোতে আয়না দিয়ে সূর্যের আলোকে ঘনীভূত করা হয়। এ পদ্ধতিতে পানি থেকে তৈরি করা বাষ্প দিয়ে টারবাইন ঘোরানো হয়।

দ্বিতীয়ত, আলোক কোষ ব্যবহার করে সরাসরি সূর্যশক্তি থেকে বিদু্যৎ উৎপাদন করা হয়।

তবে, এ পদ্ধতিতে কিছু সমস্যা রয়েছে। কারণ, সূর্য সব সময়ের জন্য আকাশে থেমে থাকে না। রাতে বা মেঘলা দিনে এর থেকে সরবরাহ পাওয়া যাবে না। এ ছাড়া রয়েছে বিনিয়োগের সমস্যা। কারণ, এ ধরনের খামার তৈরি করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়।

ঘরোয়া বায়ুশক্তি

প্রতিটি বাড়িতে নিজস্ব বিদু্যৎ সরবরাহের জন্য বাড়ি বাড়ি ছোট আকারের টারবাইন লাগিয়ে বিদু্যৎ তৈরির পস্নান্ট তৈরি করা যেতে পারে। এ ধরনের পস্নান্ট হতে ১-২৫ কিলোওয়াট বিদু্যৎ উৎপাদন করা সম্ভব। বায়ুশক্তির মাধ্যমে ৮০ ফুট টাওয়ারের উপর ১০ থেকে ২৫ ডায়ামিটার পাখা স্থাপন করলে পানির মোটর চালানোসহ বাতি জ্বালানো ও অন্যান্য কাজ করা সম্ভব। তবে এর সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো শব্দদূষণ।

বায়ুখামার

বায়ুশক্তি থেকে বৈদু্যতিক শক্তি উৎপাদনের কেন্দ্র সর্বপ্রথম ডেনমার্কে স্থাপিত (১৮৯০ সালে) হয়। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বায়ুশক্তি দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বায়ুচালিত জেনারেটর ঘোরানো হচ্ছে। দেশটিতে বায়ুশক্তি ব্যবহার করে ১৮০০ মেগাওয়াট বিদু্যৎ উৎপাদন করা হয়। ২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মোট চাহিদার পাঁচ ভাগের এক ভাগ বায়ুশক্তির সাহায্যে উৎপাদিত বিদু্যৎ দিয়ে মেটানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবার, ডেনমার্কের মোট শক্তির বিশ শতাংশ মেটানো হয় বায়ুশক্তিকে ব্যবহার করে। শক্তির এ উৎসটি পরিবেশবান্ধব ও নবায়নযোগ্য। তবে, এ ধরনের বায়ুখামারে চালিত টারবাইন পক্ষীকুলের চলার পথে বাধা সৃষ্টি করে, যা স্থানীয় পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।

ভূ-উত্তাপ শক্তি

ভূ-ত্বকের নিচে প্রচুর পরিমাণে শক্তি জমা আছে। ভূ-তাপীয় শক্তি বর্তমানে বিদু্যৎশক্তি উৎপাদনের একটি অন্যতম উৎস। এই ভূ-উত্তাপ শক্তি বিদু্যৎ উৎপাদন এবং ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট উষ্ণ রাখার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রায় আট হাজার মেগাওয়াট ভূ-উত্তাপ শক্তি উৎপাদিত হচ্ছে। এর মধ্যে দুই হাজার আট শত মেগাওয়াটই আমেরিকাতে উৎপাদিত হচ্ছে। আইসল্যান্ড বিদু্যৎ উৎপাদন ও ঘর গরম করার কাজে ব্যবহূত শক্তির বেশির ভাগই সংগ্রহ করে ভূ-তাপীয় শক্তির উৎস থেকে। নিউজিল্যান্ড ও ইতালির মোট ব্যবহূত শক্তির ১১ শতাংশ এবং ৩ শতাংশ সংগ্রহ করে ভূ-তাপীয় শক্তি থেকে। এটি পরিবেশবান্ধব এবং দিনরাত সবসময়ই এ থেকে শক্তি সরবরাহ পাওয়া সম্ভব। তবে, এ পদ্ধতিতে বিদু্যৎ উৎপাদনের পূর্বে বিশাল অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করতে হয়।

বৈদু্যতিক গাড়ি

বৈদু্যতিক গাড়ি থেকে কোনো ধরনের ধোঁয়া বের হয় না। এবং এর রক্ষণাবেক্ষণ খরচও খুবই কম। তবে, ব্যাপকভাবে প্রচলনের জন্য এটিকে প্রযুক্তিগত দিক থেকে আরও উন্নত করার কথা ভাবছে বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলো।

হাইড্রোজেন পরিবহন

হাইড্রোজেন ফুয়েল সেলে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের বিক্রিয়ায় উৎপাদিত হয়। এর সাহায্যে চলে একটি বৈদু্যতিক মোটর। এ ধরনের ইঞ্জিন থেকে পানি নির্গত হয়। তবে, এ প্রযুক্তির কিছু সমস্যা রয়েছে। বিপুল পরিমাণ হাইড্রোজেন উৎপাদনের জন্য প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যাবহার করতে হয়, ফলে এতে কার্বন উৎপাদনের কিছু সম্ভাবনা থেকেই যায়।

সমুদ্রের তাপীয় শক্তির পরিবর্তন

সৌর কিরণের প্রভাবে সমুদ্রের উপরিভাগ ও নিম্নভাগের পানির তাপমাত্রার পার্থক্য থেকে বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে বিদু্যৎশক্তি উৎপাদন করা সম্ভব। সমুদ্রের পানির তাপীয় অসমতা থেকে বিদু্যৎ উৎপাদন করার প্রযুক্তিকে সমুদ্রের তাপীয় শক্তির পরিবর্তন প্রযুক্তি বা ওটেক বলা হয়। এই শক্তিকে পুরোপুরি বিদু্যৎশক্তিতে রূপান্তর করতে পারলে তা হবে আমাদের প্রতিদিনের ব্যবহূত বিদু্যতের চেয়ে বিশগুণ বেশি।

যেভাবে দিনের পর দিন বিদু্যতের চাহিদা বাড়ছে, তাতে জীবাশ্মজ্বালানি থেকে লাগামহীনভাবে বিদু্যৎ উৎপাদন হতে থাকলে আগামী দিনে বিশ্বের জ্বীবাশ্ম জ্বালানির সঞ্চয় অবশ্যই ফুরিয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে অদূর ভবিষ্যতে বিদু্যৎ উৎপাদনে বিকল্প উৎসগুলোর উপর নির্ভরশীলতা ক্রমশই বাড়তে থাকবে। বিকল্প শক্তির উৎসগুলো ব্যবহারে কিছু জটিলতা ও সমস্যা থাকলেও এসব শক্তির উৎসই আগামীদিনের প্রধান শক্তির উৎস হিসেবে বিবেচিত হবে।
Source: Daily Ittefaq

বিদ্যুতের বিকল্প কী হতে পারে?

বিদ্যুতের বিকল্প কী হতে পারে?

দেশব্যাপী লোডশেডিংজনিত ভয়াবহ বিদ্যুতের ঘাটতি জনজীবন স্থবির করে তুলেছে। শিল্প-কলকারখানা মারাত্মক হুমকির মধ্যে। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে কিন্তু এই মুহূর্তে বিদ্যুতের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা করতে পারছে না। অথচ উন্নত দেশে বিদ্যুতের রয়েছে নানা বিকল্প। যেখানে বিকল্প এসব পদ্ধতি ব্যবহার করে বিদ্যুত্ পরিস্থিতির মোকাবিলা করা হচ্ছে। কন্তু কীি হতে পারে বিদ্যুতের বিকল্প? এ নিয়ে লিখেছেন— সাদ আব্দুল ওয়ালী
আমরা প্রযুক্তি-সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চাই অথচ বিদ্যুতের ন্যূনতম চাহিদা মেটাতে পারছি না। দিন দিন বিদ্যুত্ সঙ্কট তীব্রতর হচ্ছে। বলতে গেলে, জনজীবন ক্রমে স্থবির হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিক বিদ্যুত্ চাহিদার কাছাকাছিও আমরা যেতে পারছি না। অর্থাত্ যেমন বিদ্যুত্ উত্পাদনের কোনো লক্ষ্যমাত্রাও নেই, তেমনি নেই কোনো অগ্রগতি। সরকারেরও এ ব্যাপারে নেই কোনো সুষ্ঠু পরিকল্পনা। বিদ্যুতের এই চরম সঙ্কটে দেশবাসী উত্কণ্ঠিত—কীভাবে মিলবে এর সুষ্ঠু সমাধান। তবে বিদ্যুতেরও রয়েছে বিকল্প। কিন্তু তা কী হতে পারে?
বিকল্প শক্তির উত্স বিদ্যুতের বিকল্প শক্তির উত্স খোঁজা হচ্ছে। শুধু আমাদের দেশে নয়, সমগ্র বিশ্বে এ তত্পরতা বেড়ে চলেছে। তবে নবায়নযোগ্য শক্তিকে কাজে লাগানোর প্রয়াস অগ্রগণ্য। উন্নত দেশসহ উন্নয়নশীল দেশেও বিকল্প শক্তির প্রসারে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এসব বিকল্প শক্তি যেমন—সোলার প্ল্যান্ট, উইন্ড পাওয়ার প্ল্যান্ট, পারমাণবিক শক্তি, ভূ-উত্তাপ শক্তি, সাগরের তাপশক্তির রূপান্তর উল্লেখযোগ্য। সৌর বিদ্যুত্-সোলার প্ল্যান্ট সোলার পাওয়ার একটি নবায়নযোগ্য উত্স। ফলে এখানে বিকল্প বিদ্যুত্ হিসেবে সোলার প্ল্যান্ট কার্যকরভাবে ভূমিকা রাখতে পারবে। বাংলাদেশে বছরে গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ দিন সূর্যালোক থাকে। প্রতিদিন প্রায় পাঁচ কিলোওয়াট ঘণ্টা শক্তি এ দেশের প্রতি বর্গমিটার জমিতে আছড়ে পড়ছে। আর ভূপতিত এই সৌরশক্তিকে সঠিকভাবে বিদ্যুত্শক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারলে বাংলাদেশের বিদ্যুত্ চাহিদার একটা বড় অংশ মিটিয়ে ফেলা সম্ভব। একটি সোলার প্ল্যান্টে প্রাথমিক বিনিয়োগ অনেক বেশি মনে হলেও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ন্যূনতম কিছু খরচ ছাড়া আর তেমন খরচ হয় না। এরজন্য মাসিক কোনো বিল দিতে হচ্ছে না। গরমকালে তিন মাসে বিদ্যুত্ ঘাটতি অন্যান্য সময়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। লক্ষ্য করার বিষয়, সৌর বিদ্যুতের পিক সময় হচ্ছে গরমকাল। অর্থাত্ গরমকালে সূর্যের বিকিরণ হয় সর্বোচ্চ। কাজেই আমাদের দেশে সৌরবিদ্যুেক যথাযথভাবে কাজে লাগানো সম্ভব। এই সোলার প্ল্যান্টের সবচেয়ে বড় বাধা এর প্রাথমিক বিনিয়োগ। সে ক্ষেত্রে এর ব্যাপক প্রসারের মাধ্যমে একসঙ্গে অনেক প্ল্যান্ট স্থাপনে এবং স্থানীয় মার্কেটে এর আনুষঙ্গিক যন্ত্রগুলো তৈরির মাধ্যমে এ বিনিয়োগ কমে যেতে পারে অনেকাংশেই।
কারা ব্যবহার করছেন সৌরবিদ্যুত্ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা সৌরবিদ্যুত্ নিয়ে তাদের গবেষণা ও প্রসার অব্যাহত রেখেছে। সাধারণত আমাদের দেশের যেসব এলাকায় অর্থাত্ প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে বিদ্যুত্ এখনও পৌঁছেনি, সেখানে সৌরশক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে প্রায় ৪০ লাখের মতো মানুষ সৌরবিদ্যুত্ ব্যবহার করছে। এসব এলাকার সচ্ছল পরিবারের মানুষ এ প্রযুক্তির সুবিধা নিচ্ছে। ভারতে সৌরশক্তিকে ব্যবহার করে বিদ্যুত্ উত্পাদন করা হচ্ছে এবং সেখানে ভবিষ্যতের জন্য বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যাপকভাবে বিদ্যুত্ উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, রাজস্থানে এ সৌরবিদ্যুত্ খুবই সম্ভাবনাময়। নেপালেও সৌরবিদ্যুত্ উত্পাদিত হচ্ছে।
বায়ুশক্তিচালিত বিদ্যুত্-উইন্ড পাওয়ার প্ল্যান্ট বাতাসের শক্তিকে একটি সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিদ্যুত্ উত্পাদন করা সম্ভব। আর তা করা যায় উইন্ড পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের দ্বারা। দেশের সমুদ্রতীরবর্তী এলাকায় ১০০ থেকে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদনে উইন্ড পাওয়ার প্ল্যান্ট বা বায়ুশক্তিচালিত বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এটিও একটি নবায়নযোগ্য শক্তির উত্স। এটি বিদ্যুত্ উত্পাদনের সহায়ক হিসেবে কাজে লাগতে পারে। বায়ুশক্তিচালিত টারবাইন দ্বারা যথেষ্ট বিদ্যুত্ উত্পাদন করা সম্ভব। বিভিন্ন দেশে এ প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো হচ্ছে। বাংলাদেশে গত দুই বছর আগে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তা হচ্ছে পিডিবির ব্যবস্থাপনায় কুতুবদিয়ায় পাইলট প্রকল্পের অধীনে একটি উইন্ডমিল তৈরি করা হয়েছিল, যার উত্পাদন ক্ষমতা ছিল এক মেগাওয়াট। সমুদ্রের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে অফশোর উইন্ডমিল বানানো এবং রক্ষণাবেক্ষণ ভূমিতে বানানো উইন্ডমিলের চেয়ে ব্যয়বহুল হলেও এটি হবে জোরালো এবং সব সময় বাতাসের উত্স থাকায় উত্পাদন বেড়ে যাবে অনেকাংশে। তা ছাড়া এ ধরনের উইন্ডমিল আকারে বড় হবে। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ডেনমার্ক, হল্যান্ড এ প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে শক্তি ও বিদ্যুত্ উত্পাদনের দিক থেকে অনেক অগ্রসরমান। পার্শ্ববর্তী দেশগুলো যেমন—নেপাল ও ভারতে এ ধরনের উইন্ডমিল স্থাপন করা হচ্ছে।
ভারত ও নেপালে বায়ুশক্তিচালিত বিদ্যুত্ ভারতে বায়ুশক্তি প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ২০১২ সাল নাগাদ ৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। উজানা গেছে, নেপাল খুব শিগগিরই নবায়নযোগ্য শক্তির একটি উত্স হিসেবে বায়ুশক্তি ব্যবহার করতে যাচ্ছে। এ জন্য তারা একটি জাতীয় পলিসির খসড়াও চূড়ান্ত করেছে, যার লক্ষ্য হচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে বিদ্যুত্ উত্পাদনে বাণিজ্যিক টারবাইন স্থাপন করা। এতে একটি পাইলট স্কিমের আওতায় ৫০০ কিলোওয়াটের অধিক শক্তি জেনারেট করতে পারবে। সোলার প্ল্যান্ট অপেক্ষা এটি একটি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি। তা ছাড়া টারবাইন স্থাপনের জন্য স্থানীয় মার্কেট থেকে এর আনুষঙ্গিক যন্ত্রাদি পাওয়া যাবে। পারমাণবিক শক্তি পারমাণবিক শক্তি দ্বারা বিদ্যুত্ উত্পাদন করা যেতে পারে। অবশ্য বর্তমান সরকার এ ব্যাপারে যথেষ্ট চিন্তাভাবনা করছে। একটি ছোট আকারের পরমাণু কেন্দ্র থেকে অসম্ভব পরিমাণে শক্তি উত্পাদন করা সম্ভব। এ পারমাণবিক শক্তি বিদ্যুত্ উত্পাদনের একটি সহায়ক সমাধান হতে পারে। তবে এ ধরনের বিদ্যুত্ উত্পাদনে বড় বাধা হচ্ছে এর ক্ষতিকর বর্জ্য এবং ব্যয়বহুল উত্পাদন ব্যয়।
জিওথার্মাল বা ভূ-উত্তাপ শক্তি শীতপ্রধান দেশে এ ধরনের শক্তি কাজে লাগানোর প্রয়াস লক্ষণীয়। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুত্পাতে যে শক্তি পরিলক্ষিত হয় তার চেয়েও কয়েকগুণ শক্তি ভূপৃষ্ঠের নিচে সংরক্ষিত রয়েছে। এই ভূ-উত্তাপ ব্যবহার করে শীতপ্রধান দেশে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট উষ্ণ রাখাসহ বিদ্যুত্ উত্পাদনের কথা জোরেসোরে উচ্চারিত হচ্ছে। এ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সারা বিশ্বে উত্পাদিত প্রায় আট হাজার মেগাওয়াট জিওথার্মাল বা ভূ-উত্তাপ শক্তির মধ্যে আমেরিকাতে প্রায় দুই হাজার ৮শ মেগাওয়াট শক্তি উত্পাদিত হচ্ছে। এটি ব্যয়বহুল প্রজেক্ট।
সাগরের তাপশক্তির রূপান্তর সাগরের পানিতে ওপরে এক রূপ আর নিচের দিকের পানিতে আরেক রূপ। সূর্যের আলোয় ওপরের পানি ক্রমে উষ্ণ হয় এবং নিচের দিকের পানি থাকে শীতল। অল্প তাপে ফুটতে থাকে এমন তরল গ্যাস ব্যবহার করে সাগরের ওপরের দিকের পানি থেকে তাপ সংগ্রহ করে বিশেষ প্ল্যান্টের সহায়তায় টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুত্ উত্পাদন করা যায়। আবার এ তরল গ্যাসকে সাগরের গভীরে পাঠিয়ে পানি শীতল করা সম্ভব। এর মাধ্যমে কয়েকগুণ বেশি বিদ্যুত্ উত্পাদন করা যেতে পারে।
করণীয় যা হতে পারে আমাদের দেশে সৌরবিদ্যুত্ প্রকল্প শুরু হয়েছিল প্রথমে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে। কিন্তু আজ আমাদের জাতীয় বিদ্যুত্ ব্যবস্থার যে অবনতি তাতে সৌরবিদ্যুতের সম্ভাবনাকে স্তিমিত রাখা মোটেও যুক্তিসঙ্গত হবে না। বরং এ প্রযুক্তিকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে সঠিক পরিকল্পনামাফিক এগিয়ে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের। এর মাধ্যমে আমরা বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদা মেটাতে পারব নিঃসন্দেহে। শহরে বাড়ির ছাদে সৌরবিদ্যুত্ প্ল্যান্ট স্থাপন করা যেতে পারে। সমপ্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সৌরবিদ্যুত্ প্রকল্প চালু করা হয়েছে, যা একটি শুভ উদ্যোগ হিসেবে চিহিত। ব্যক্তিগত উদ্যোগে যাতে এ প্রযুক্তি প্রসার লাভ করতে পারে সে জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বল্পসুদে ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিদ্যুতের বর্তমান প্রেক্ষাপটে জাতীয় সংসদের সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত কমিটি বিকল্প শক্তি হিসেবে সৌর, বায়ু এবং পানি বিদ্যুত্ উত্পাদনের সুপারিশ করেছেন। দেশে উত্পাদিত বিদ্যুতের শতকরা ৮৬ ভাগ উত্পন্ন হয় গ্যাসচালিত বিদ্যুেকন্দ্র থেকে। আর বাকি বিদ্যুত্ উত্পন্ন হয় তরল জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে। সামান্য পরিমাণ বিদ্যুত্ উত্পন্ন হয় সৌরশক্তি থেকে। এ অবস্থার পরিবর্তন হওয়া দরকার। আরও অধিক পরিমাণে সৌরবিদ্যুত্ উত্পন্ন হওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া বায়ুশক্তি বিদ্যুত্ উত্পাদনের একটি নির্ভরযোগ্য উত্স হতে পারে। বর্তমান সরকার পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের কথা চিন্তাভাবনা করছে। এ শক্তির দ্বারা বিকল্প বিদ্যুত্ উত্পাদনের একটি পদক্ষেপ নিতে পারে এ সরকার। বিদ্যুতের বিকল্প নবায়নযোগ্য কী কী শক্তি কাজে আসতে পারে তা যাচাই-বাছাই ও পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে আমাদের সঠিক সিদ্ধান্তে আসা জরুরি হয়ে পড়েছে। আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় বিদ্যুত্ একটি অতীব চাহিদাসম্পন্ন উপকরণ। বিদ্যুত্ ব্যবস্থার সঠিক প্রাপ্তি সুনিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের জীবনযাত্রা, শিল্প, কলকারখানা, অফিস, ব্যবসা-বাণিজ্য সব ক্ষেত্রে যে অচল অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে তা থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় থাকবে না। কাজেই আমাদের যেমন বিদ্যুত্ উত্পাদন বাড়াতে হবে, তেমনি প্রচলিত এই বিদ্যুত্ ব্যবস্থার বিকল্প কী হতে পারে সে ব্যাপারে ভেবে শিগগিরই একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে।
ইমেইল: walisearch@yahoo.com

Wednesday, June 20, 2012

Fuel Saver & Power Tune Electricity Saver: Save up to 25% monthly electricity bill

Please click this image for large View

বিদ্যূত খরচের ব্যাপারে সাবধান ....

 বিদ্যূত খরচের ব্যাপারে সাবধান ....

গত মার্চ মাস থেকে বিদ্যূত বিলের রেট বেড়েছে .... নতুন রেটটা এমন:
০-১০০ ইউনিট: ৩.০৫ টাকা/ইউনিট,
১০০-৪০০ ইউনিট: ৪.২৯ টাকা/ইউনিট,
৪০০+ ইউনিট: ৭.৮৯ টাকা/ইউনিট।
তবে, এই কাহিনীর সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং অংশ হল, ৩০১ ইউনিট কিংবা এর বেশি ব্যবহার হলে মোট ব্যবহার যেই উচ্চতর মূল্য শ্রেণীতে পড়বে পুরা বিলই সেই ইউনিটের চার্জ হবে। অর্থাৎ ৪০০ ইউনিটের ব্যবহার চার্জ ৪.২৯ * ৪০০ = ১৭১৬ টাকা হলেও ৪০১ ইউনিটের বিল হবে ৪০১ * ৭.৮৯ = ৩১৬৩.৮৯ টাকা। surprised অর্থাৎ ১৭১৬ টাকার পরের ব্যবহার খরচ ৩১৬৩.৮৯ টাকা, এর মাঝে ১৭১৬ + ৭.৮৯ =১৭২৩.৮৯ টাকা টাইপের কোনো ব্যবহার খরচ নাই! এগুলোর সাথে ভ্যাট, লাইন রেন্ট ইত্যাদি যোগ হয়ে মোট বিল হবে।
সুতরাং, বুঝে শুনে বিদ্যূত ব্যবহার করুন, তা না হলে মাথায় বিলের বজ্রপাত হতে পারে।  shame

২৭-০৬-২০১২

 

নিয়ন্ত্রক (এডমিন)

http://forum.projanmo.com 


সোলার এনার্জি সেলস উদ্ভাবন করে ইতিহাস গড়লেন বাংলাদেশী বিজ্ঞানী


সোলার এনার্জি সেলস উদ্ভাবন করে ইতিহাস গড়লেন বাংলাদেশী বিজ্ঞানী
০ ইত্তেফাক রিপোর্ট

বিশ্বের সবচেয়ে কার্যকর সোলার এনার্জি সেলস উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে ম্যারিল্যান্ডের কপিন স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং গবেষক বাংলাদেশী বিজ্ঞানী ডঃ জামালউদ্দিন ইতিহাস গড়েছেন। কপিন স্টেট ইউনিভার্সিটির ন্যাচারাল সাইন্সের সহকারী অধ্যাপক এবং ইউনিভার্সিটির নেনোট্যাকনোলজি রিচার্স সেন্টারের গবেষক ডঃ জামালউদ্দিন এবং তার পাঁচ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট শিক্ষানবিশ গবেষকরা স্পেক্ট্রোল্যাবের সোলার সেলের তুলনায় প্রায় ৪ পারসেন্ট অধিক কার্যকর সোলার এনার্জি সেল উদ্ভাবন করলেন।

প্রসঙ্গত, এ মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সোলার এনার্জি সেল তৈরির শীর্ষস্থানটি দখলে রেখেছে বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রোল্যাব। ২০০৬ সাল থেকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সোলার সেল তৈরির সুনামটিও তাদের। নিজের এই উদ্ভাবনের বিষয়ে প্রতিক্রিয়াতে ডঃ জামালউদ্দিন জানান, এটা সত্যিই রোমাঞ্চকর এবং আশাব্যঞ্জক একটি বিষয় যা আরো অধিক নেনোট্যাকনোলজির ওপর গবেষণাকল্পে আমাদের আরো উৎসাহ যোগাবে।

ড. জামাল উদ্দিন এবং তার গ্রুপ সোলার সেল থেকে শতকরা ৪৩.৪ পুনঃব্যবহারযোগ্য এনার্জি উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছে যা বিশ্বে এই উৎপাদনের সর্বোচ্চ মাত্রা। ড. জামাল মেটাফিজিঙ্ক সফট ওয়ার-কমসল এবং পিসি-ওয়ান ডি ব্যবহার করে এই ক্ষেত্রে নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়লেন।

ড. জামালের মতে, ২০১০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই তারা এই এনার্জি উৎপাদন শতকরা ৫০ ভাগে উন্নীত করতে সক্ষম হবেন। এই গবেষণাকল্পে প্রণোদনা স্বরূপ ম্যারীল্যান্ড ট্যাকনোলজী ডেভেলোপমেন্ট কর্পোরেশন গত জুলাই ২০০৯-এ ৮৯,০০০ ডলার প্রদান করেন। আগামী ২৬ অক্টোবর ড. জামালের নেতৃত্বে এই কপিনের গবেষণা দল ম্যারিল্যান্ডের ফোর্ট ডেট্রিক আর্মি রিসার্চ ল্যাবে খ্যতিমান নেনোট্যাক সাইন্টিস, স্কলারস এবং ভিজিটরসদের সামনে তাদের উদ্ভাবনী বিষয়টি উপস্থাপন করবেন।

ড. জামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জের মরহুম আব্দুল জলিল ও বেগম ফজিলাতুন্নেছার পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান ড. জামাল। বর্তমানে তার পরিবার রাজধানীর ১৯৮ নং এলিফ্যান্ট রোডে বসবাস করছে।

ড. জামালের সহোদর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এন্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজের (বিজ) সিনিয়র রিচার্স ফেলো ড. এম জসিমউদ্দিন ইত্তেফাককে বলেন, ছোটবেলা থেকে তার ভাই অসম্ভব মেধাবী ছিলেন। তার এই সাফল্য পুরো বাংলাদেশের।

সময় মেপে ঘুরবে প্যানেল

Tuesday, June 19, 2012

 বিদ্যুৎ উৎপাদন না বাড়িয়ে কিভাবে বাংলাদেশের যন্ত্রণাদায়ক বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করা যায়?

 বিদ্যুৎ উৎপাদন না বাড়িয়ে কিভাবে বাংলাদেশের যন্ত্রণাদায়ক বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করা যায়?

প্রথমেই বলে রাখি এই পোস্টটি একটি গবেষণামুলক পোস্ট যাতে বাংলাদেশের চলমান বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। অনুগ্রহপূর্বক সুদীর্ঘ ভূমিকাটুকু পড়বেন এবং শেষে আপনার নিজেস্ব মন্তব্যটি দিবেন।

বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান নিয়ামক। লোড শেডিং যা আমাদের দেশের সারা বছরের অনাকাংক্ষিত সঙ্গী। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে লোড শেডিং এর কারণে দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। আর তাই এর হাত থেকে বাঁচতে আমাদের প্রচেষ্টারও শেষ নেই । এখন গড়ে ৭-৮ ঘন্টা বিদ্যুৎ না থাকা বেশ স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিনত হয়েছে। তার চেয়ে বড় সমস্যা শৃঙ্খলহীন লোডশেডিং যা পিক আওয়ারে প্রতি ২০-৩০ মিনিট পর পর যাতায়াত করে থাকে । ফলে অসহ্য একটি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে । বর্তমান বাংলাদেশের এই জাতীয় সমস্যার কারনে বিদেশী অনেক প্রতিষ্ঠান এদেশ থেকে ব্যাবসা সম্প্রসারনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে এবং নিজেদের গুটিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে ফলে বিদেশী বিনিয়োগ কমে আসছে। যা আমাদের দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

কেন এই সমস্যা?
এই মারাত্মক সমস্যাটি সৃষ্টির প্রধান কারণ হচ্ছে সময়োপযোগী পদক্ষেপ না নেওয়া এবং দূরদর্শিতার অভাব। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও, ভাঙচুর হচ্ছে তার কারন বিশৃঙ্খল বিদ্যুৎ প্রনয়ন ব্যাবস্থা এবং সাধারন গ্রাহকের সাথে দূরত্ব বৃদ্ধি। ফলে দিনে অসংখ্য বার লোডশেডিং হচ্ছে। স্বভাবতই সাধারন গ্রাহক
রাগান্বিত হচ্ছেন। সত্যি বলতে কি আমিও এর ব্যাতিক্রম নই।  এছাড়াও আমাদের জাতীয় বাজেটের বিভিন্ন খাতে উচ্চ প্রত্যাশা এবং বাংলাদেশের ৫ বছর মেয়াদী সরকার ব্যাবস্থার কারনে দীর্ঘ মেয়াদী বিদ্যুৎ প্রকল্প গুলো সক্রিয় করন ও বাস্তবায়নের থেকে সরকার অনেকটা উদাসীন মনোভব দেখায়। ফলশ্রুতিতে বছরের পর বছর ধরে অবহেলায় এই প্রকল্প গুলো স্থবির হয়ে পরেছে। আপনি যদি বিদ্যুৎ বিভাগের কোন কর্মকর্তা হন তবে হয়তো ভাবছেন সুশৃঙ্খল বিদ্যুৎ প্রনয়ন ও গ্রাহকের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করলেই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? তবে আমি বলব নিশ্চয়ই, সঠিক ব্যাবস্থাপনার মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান করা যায় অনুগ্রহ করে বিস্তারিত পড়ুন।

যেভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে
বাংলাদেশের বিদ্যুৎবিভ্রাট কী পরিমাণ প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা আর বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। সম্প্রতি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সংবাদে জানতে পারলাম জাপান বাংলাদেশে বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে বিদ্যুৎ সমস্যাকে দায়ী করেছে আর করবেনাই বা কেন সত্যি কথা বলতে কি আমি যেই পোস্টটা লিখছি তা লিখতে পুরো ১ দিন সময় লেগেছে যাই হোক ফলে সরকার আলাদা ভাবে জাপান সিটি স্থাপন করার কথা বিবেচনা করছে। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে ব্যাবসা লাভজনক একথা কারো অজানা নয় কারন অন্যান্য দেশের তুলনায় এখানে শ্রমের মুল্য অনেক কম, অন্যান্য দেশের তুলনায় উচ্চ মানের সরকারি ট্যাক্স জটিলতা নেই এবং সরকারিভাবে অনেক সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে কিন্তু এত সব সুবিধা থাকার পরেও ব্যবসার মুল শক্তি বিদ্যুৎ সমস্যার কারনে শুধু জাপান নয় অনেক বিদেশী সংগঠন এদেশে ব্যাবসা সম্প্রসারনে নিরুৎসাহিত হতে বাধ্য হচ্ছে।

বিকল্প ব্যাবস্থার মাধ্যমে এর সমাধান কি সম্ভব?
বিকল্প ব্যাবস্থা হিসেবে প্রথমে সৌরবিদ্যুৎ এর কথা বলি, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ওয়াটের মূল্য প্রায় ২.০ ডলার। বিকল্পভাবে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করে আমাদের বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করারও অনেক জটিলতা রয়েছে কারণ বর্তমান মূল্যে এক মেগাওয়াট ডিজেল বা ফার্নেস অয়েলচালিত জেনারেটরের দাম প্রায় ৩.০-৩.৫ কোটি টাকা। এই মূলধনের খরচসহ ডিজেলচালিত জেনারেটরে বিদ্যুতের দাম পড়বে ১০-১২ অর্থাৎ বর্তমান পিডিবির বিদ্যুতের দামের গড়ে প্রায় তিন গুন এবং একই ভাবে গ্যাসের মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুৎ এর মূল্য বর্তমান মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি হবে। ফলে সরকারকে প্রচুর ভর্তুকি দিতে হবে। এছারাও অন্যের কাছ থেকে বিদ্যুৎ ধার করার একটি সম্ভাবনা রয়েছে কিন্তু আমাদের দেশের এক তৃতীয়াংশ বর্ডারের অবস্থান নিয়ে সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতেও বিদ্দুতের উৎপাদন পর্যাপ্ত নয়। তবে যতদূর জানি বর্তমান সরকার উচ্চ মূল্যে ভুটান ও ভারত থেকে বিদ্যুৎ নিচ্ছে।

বিদ্যুৎ সমস্যা লাঘবে করনীয় কি?
বাসায় সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ানো এবং সাধারন মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অপচয় রোধ করা গেলে বিদ্যুৎ সমস্যা কিছুটা লাঘব হবে কিন্তু তাতে করে অনিয়ন্ত্রিত ব্যাবস্থার কারনে বিদ্যুতের সুষম বণ্টন সম্ভব হবে না।

চলুন এখন সমাধানের জন্য মুল প্রসঙ্গে আসি আমাদের দেশের উৎপাদিত বিদ্যুৎ কিভাবে সুশৃঙ্খল ভাবে বণ্টন করা যায় এবং দিনে অসংখ্য বার লোডশেডিং এর হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়?
বর্তমান বিদ্যুৎ সমস্যায় সৃষ্ট জনদুর্ভোগ নিরসনের একটি মারাত্মক সমাধান রয়েছে। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য অনেক বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট বসিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন বাড়ানো একটি দীর্ঘ মেয়াদী ও প্রচুর ব্যয় সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু বিদ্যুত উৎপাদন না বাড়িয়ে উৎপাদিত বিদ্যুতের সঠিক বণ্টনের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে এক নিমেষেই পরিত্ত্রান পাওয়া সম্ভব

১, প্রথমে আমাদের প্রতিটি বৈদ্যুতিক প্ল্যান্টের উৎপাদন মাত্রা আলাদা ভাবে নির্ণয় করতে হবে।
২, আলাদাভাবে প্রতিটি বৈদ্যুতিক প্ল্যান্টের গ্রাহকসংখ্যা গননা করতে হবে।
৩, বিদ্যুৎ ব্যাবহারের সময়সীমা ( পিক আওয়ার ও অফ পিক আওয়ার ) সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে।
৪, External Electric Meter Maintaining Device যুক্ত করা
৫,গ্রাহকদের জন্য এক ধরনের Indoor Electric Meter Maintaining Device তৈরি করতে হবে।
6,সঠিকভাবে প্রক্রিয়াটিকে পরিচালনা করতে হবে।

প্রথমের তিনটি ধাপ সম্পর্কে বিদ্যুৎ বিভাগ খুব ভালভাবে দক্ষতার পরিচয় রাখেন। ৪ ও ৫ নম্বর ধাপটি নতুন কিন্তু ৬ নম্বর ধাপটি সঠিকভাবে পালন না করার জন্য সারা দেশের মানুষকে অনিয়ন্ত্রিত বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সন্মুখিন হতে হচ্ছে। তাই আমি যতটা সম্ভব সহজভাবে আপনার কাছে ৪,৫ ও ৬ নং ধাপগুলো উপস্থাপন করার চেষ্টা করছিঃ-

External Electric Meter Maintaining Device কি?
External Electric Meter Maintaining Device ( EEMMD )হচ্ছে একটি ডিভাইস যা একটি প্ল্যান্টের উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমান এবং গ্রাহক পর্যায়ে Indoor Electric Meter Maintaining Device এর মাধ্যমে ব্যাবহারের চাহিদাকে রিড করতে পারবে । অর্থাৎ কি পরিমান বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে এবং তার প্রেক্ষাপটে কতটুকু ব্যয় হচ্ছে সে সম্পর্কে External Electric Meter Maintaining Device স্পষ্ট ধারনা রাখবে।

Indoor Electric Meter Maintaining Device কি ?
Indoor Electric Meter Maintaining Device ( IEMMD ) হচ্ছে গ্রাহকের বর্তমান মিটারের সাথে যুক্ত একটি সাধারন ডিভাইস যা মুল প্লান্টে অবস্থিত EEMMD এর নির্দেশ অনুসরণ করবে এবং গ্রাহকের কাছে বিদ্যুৎ ব্যাবহারের সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা প্রেরন করবে। IEMMD তে ডিজিটাল সিগন্যাল বাতি ও একটি সুইচ থাকবে এটি দেখতে ডিজিটাল ঘড়ীর মত। গ্রহক EEMMD থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পিক আওয়ার এবং অফপিক আওয়ারে পছন্দ মত সময়ে লোডশেডিং নিতে পারবে।
EEMMD ও IEMMD এর মাধ্যমে কিভাবে বিদ্যুৎ এর সুষম বণ্টন করা যায়?
ধরি, আমাদের একটি প্ল্যান্ট “A” এর গ্রাহক সংখ্যা ১০০০০ জন এর জন্য প্রতিদিন ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদার বিপরীতে গড়ে ৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে অর্থাৎ প্রতিদিন এই প্লান্টে ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি দেখা দেয়। এই ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এর সময় ধরি টানা ১ ঘন্টা।
এখন এই ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি পুরনের জন্য এই ১০০০০ জন গ্রাহকের বাসায় IEMMD যুক্ত করা হল।
প্লান্টে অবস্থিত EEMMD ডিভাইসকে পিক আওয়ার এবং অফপিক আওয়ার সম্পর্কে ধারনা দেওয়া হল। ধরি, অফপিক আওয়ার রাত্রি ১২ টা থেকে সকাল ১১ টা পর্যন্ত এবং পিক আওয়ার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত্রি ১০ টা পর্যন্ত।
এখন EEMMD এই ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণের জন্য IEMMD ডিভাইসকে অর্থাৎ গ্রাহকের ডিভাইসকে পিক আওয়ারে গ্রাহকের পছন্দ মত সময়ে লোডশেডিং দেয়ার নির্দেশ দেবে। ইমারজেন্সি লাইটটি সবসময় গ্রাহককে বর্তমান চাহিদা সম্পর্কে হলুদ, সবুজ, লাল বাতির মাধ্যমে ধারনা দেবে। ধরুন বর্তমান রিজার্ভ বাড়ছে অর্থাৎ গ্রাহকের ডিভাইসে সবুজ বাতি, যখন চাহিদার পরিমান বাড়বে তখন হলুদ, এবং উৎপাদনের লক্ষমাত্রা অতিক্রম করলে লাল বাতি জ্বলবে। এতে করে স্বভাবতই একজন গ্রাহক জরুরী অবস্তায় বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের চেষ্টা করবে।
EEMMD
IEMMD গ্রাহকের স্ক্রিনঃ
অফপিক আওয়ার= ১ ঘন্টা
পিক আওয়ার=১ ঘণ্টা
ইমারজেন্সি= যেকোনো সময়
পাওয়ার= অন/অফ

সহজ কথায় আপনার IEMMD ডিভাইসে উল্লেখিত পিক আওয়ারে যদি ১ ঘন্টা উল্লেখ থাকে তবে পিক আওয়ারে আপনার পছন্দ মত সময়ে নির্দিষ্ট পরিমান ( EEMMD প্রদত্ত ) সময় ডিভাইসের পাওয়ার অফ করে লোডশেডিং দিতে বাধ্য থাকবেন। অন্যথায় স্বয়ংক্রিয় বর্তমান অবস্থার মত আপনার লোডশেডিং হবে। এছাড়াও ইমারজেন্সি ভাবে যেকোনো সময় IEMMD লোডশেডিং দিতে পারবে।

IEMMD এর সুবিধা কি?
১, এর মাধ্যমে আপনার ঘরে বিদ্যুৎ কখনো হটাৎ করে চলে যাবেনা।
২, আপনি আপনার পছন্দ মত সময়ে লোডশেডিং নিতে পারবেন।
৩, ব্যাবসায়ীরা তাদের কাজের সময় সম্পর্কে সচেতন থাকবে।
৪, বিদ্যুৎ সাস্রয়ে সকলেই সতর্ক হবে।
৫, বিদ্যুৎ অফিস ভাঙচুর ও বিশৃঙ্খলা কমে যাবে।
৬, আপনার ইলেক্ট্রনিক্সের জিনিসপত্রের আয়ু বাড়বে।
৭, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে উত্তপ্ত রাজনৈতিক অঙ্গন শান্ত হবে।
৮, ধীরে ধীরে জাতীয় গ্রেডে নতুন বিদ্যুৎ সংযোজন হলে তা আরও সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।
৯, অফ পিক আওয়ারে সৃষ্ট লোডশেডিংএ একটি ভাল রিজার্ভ গড়ে উঠবে যা কৃষি কাজ যেমন ডিপ, মোটার ও অন্যান্য কাজের জন্য সহায়ক হবে।
১০, পছন্দ মত সময়ে লোডশেডিং হলে শিল্প কারখানায় ঐ সময়ে পরিকল্পিত ভাবে ব্যাবস্থা নেওয়া যাবে যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।

এই এক পাতায় এত বড় একটি সমস্যার সমাধান বিস্তারিত ভাবে দেওয়ার অবকাশ নেই তার পড়েও চেষ্টা করলাম যতটুকু সম্ভব উপস্থাপন করার। আপনার এ সংক্রান্ত কোন মন্তব্য থাকলে নিম্নে লিখুন। আর ভাল লাগলে শেয়ার করুন।

সর্বশেষ আপডেট মঙ্গলবার, ০৫ জুন ২০১২ ১৫:১৪
Written by :
শাহ সুলতান রনি

Source: http://www.banglahili.com

সৌর ব্যাবহারের ৭টি কারণ

সৌর ব্যাবহারের ৭টি কারণ

পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি, সৌর ব্যবহারের আর কোন কারণ আছে কী? সৌর ব্যবহারের মামাবিধ কারণগুলো জানলে আপনি অবাক হবেন।
  1. বিদ্যুৎ চলে গেলে এটি আপনি  বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশে লোডশেডিং বেড়ে যায়, সে সময় বাড়িতে সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকলে, আপনি লোডশেডিং-এর সময়ও বিদ্যুতের ব্যবহার চালু রাখতে পারবেন।
  2. সৌর ব্যবস্থার খরচ ক্রমেই হাতের নাগালে চলে আসছে -- বিগত দশকের প্রতিটি বছরেই  সৌর বিদ্যুতের  মূল্য ৩.৫% হারে কমে এসেছে ।
  3. বাংলাদেশে এটিই সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন শক্তির উৎস -- পানিবিদ্যুত এবং বাতাস সামান্য কিছু শক্তি সরবরাহ করতে পারে, কিন্তু সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থার অসীম।
  4. Solar panels last সৌর প্যানেলের স্থায়ীত্ত -- বেশিরভাগ বিদ্যুৎ  প্যানেল ২৫ বছর বা তার বেশি বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে থাকে। কিন্তু একটি সোলার প্যানেল তৈরি করার পিছনে যে শক্তি ব্যয় হয় তা  দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে প্রাকৃতিক শক্তিতে রুপান্তর হয়।  
  5. এটি আইপিএস সিস্টেমের চেয়ে ভাল একটি বিকল্প ব্যবস্থা। -- আইপিএস এবং সৌর বিদ্যুৎ ব্যবস্থা-দুটোই খরচসাপেক্ষ, কিন্তু আইপিএস নতুন করে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে সক্ষম নয় যা সৌরশক্তি দ্বারা সম্ভব, আইপিএস বিদ্যুতের ঘাটতি পূরন করতে পারে না, কিন্তু সৌরশক্তি দ্বারা সবসময় নতুন ও পরিচ্ছন্ন শক্তি তৈরি করা যাচ্ছে।
  6. কেবল ৪০ ভাগ বাংলাদেশী নাগরিক বিদ্যুৎ গ্রীডের আওতাই আছে -- যারা জাতীয় বিদ্যুতের আওতায় নেই, তাদের জন্য সৌর বিদ্যুৎ ব্যবস্থা একটি সর্বোত্তম পন্থা।  বাংলাদেশের জনপ্রতি এনার্জি ব্যবহার এর হার প্রায় (১৩৬ কিলোওয়াট-আওয়ার) সেখানে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবস্থা একটি আশীর্বাদ স্বরূপ।
  7. এটি আই.পি.এস. এর চাইতে অনেক বেশি এফিশিয়েন্ট/কার্যকর: আই.পি.এস.-এ বিদ্যুতকে তিনবার DC থেকে AC-রুপান্তরিত করা হয়, এবং প্রত্যেকবারই খানিকটা করে বিদ্যুতের অপচয় হয়। কিন্তু একটি সোলার সিস্টামের ক্ষেত্রে, একটি সম্পূর্ণ DC সিস্টাম রাখা যায়। 
chart
প্রতিবেদন:
- আমাদের পণ্যের তথ্য
- আপনার গৃহস্থালির চাহিদা পূরণে সহায়ক


Source: http://www.parasol-energy.com/bn/

সৌরশক্তিচালিত মোটরসাইকেল উদ্ভাবন করেছে মাগুরার জুবায়ের।

সৌরশক্তিচালিত মোটরসাইকেল উদ্ভাবন করেছে মাগুরার জুবায়ের।

ট্রাফিক আইন সহায়ক, জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব নতুন ধরনের মোটরসাইকেল উদ্ভাবন করেছেন মাগুরা শহরের পারনান্দুয়ালী এলাকার যুবক জুবায়ের হোসেন। জ্বালানি তেলের বদলে তাঁর মোটরসাইকেলটি চলবে সৌরশক্তি ও বাতাসের সাহায্যে। জুবায়ের তাঁর উদ্ভাবিত মোটরসাইকেলের নাম দিয়েছেন ডিজিটাল ইজি সাইকেল। এটি এমন একটি স্বয়ংক্রিয় যৌথ সার্কিটের মাধ্যমে পরিচালিত, যার ফলে মোটরসাইকেলটি একটি বিশেষ ধরনের হেলমেট ছাড়া স্টার্ট নেবে না। যা মোটরসাইকেল চুরি প্রতিরোধ করবে এবং ট্রাফিক আইনের সহায়ক হবে। এটির ডিজাইন করা হয়েছে অনেকটা জাপানি হোন্ডা ফিফটি সিসি মোটরসাইকেলের মতো। তেলে না চলায় মোটরসাইকেলে কোনো ধোঁয়া হয় না। এটির সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার। এতে কোনো শব্দ হয় না, যার ফলে এটি পরিবেশবান্ধব।

মোটরসাইকেলটির দুই পায়ে দুটি ব্রেক আছে। এ ছাড়া সাইকেলটিতে বৈদ্যুতিক এক্সেলেটর স্থাপন করা হয়েছে। এটিতে কোনো গিয়ার দেওয়া হয়নি। গোটা সাইকেলে ১২ ভোল্টের তিনটি ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে, যার মধ্যে দুটি ব্যবহৃত হয় মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন-শক্তি হিসেবে ব্যবহৃত মোটরটি চলতে, অপরটি ব্যবহৃত হয় হর্ন, বাল্ব, সিগন্যাল দেওয়ার জন্য। সাইকেলের সামনের দিকে হেডলাইট এলাকায় ছোট আকৃতির বৈদ্যুতিক ফ্যানের আকারে তিনটি পাখা আছে। মোটরসাইকেলটি চললে পাখা তিনটি সজোরে ঘুরতে থাকে। যার বাতাস থেকে তৈরি হয় শক্তি। মোটরসাইকেলের প্রতিটি ব্যাটারিই সচল হয় এটির সঙ্গে সংযুক্ত সৌর প্যানেল ও সামনের দিকে থাকা পাখার ঘূর্ণায়মান বাতাস থেকে পাওয়া শক্তি ও জমা হওয়া চার্জ থেকে। সব ব্যাটারির সঙ্গেই সামনের দিকে থাকা পাখা ও সৌর প্যানেলের সংযোগ দেওয়া আছে। মোটরসাইকেলটিতে একটি গিয়ার বক্সের মাধ্যমে বিশেষ ধরনের একটি সার্কিট সংযুক্ত আছে। যার ফলে যখনই মোটরসাইকেলটিতে চলন্ত অবস্থায় ব্রেক করা হয় কিংবা ঝাকি তৈরি হয় তখন ওই সার্কিটের সঙ্গে সংযুক্ত পেনিয়ামে ঘর্ষণ প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ তৈরি হয়, যা তারের মাধ্যমে ব্যাটারিতে চার্জ হিসেবে জমা হয়।

মোটরসাইকেলটিতে কোনো প্রচলিত ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়নি। এক হর্স পাওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ডিসি ভোল্টের মোটরকে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এই মোটরের সঙ্গে চেইনের মাধ্যমে চাকার সংযোগ আছে। মোটরটি চলে ব্যাটারির শক্তিতে। যেহেতু ট্রাফিক আইন অনুযায়ী মোটরসাইকেলে দুজন চড়া আইনসংগত, সেহেতু জুবায়েরের মোটরসাইকেলটিতে সর্বোচ্চ দুজনই চড়তে পারবে। এজন্য মোটরসাইকেলটিতে এমন একটি স্বয়ংক্রিয় সুইচ যুক্ত করা আছে, যা প্রাপ্তবয়স্ক দুজনের অতিরিক্ত ব্যক্তি চড়লেই ওই সুইচটির মাধ্যমে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাবে।
এ ছাড়া এটি চালানোর জন্যে মোটরসাইকেলের সঙ্গে জুবায়েরের নিজের তৈরি একটি বিশেষ ধরনের হেলমেট নিতে হবে। এ হেলমেটে এমন একটি সার্কিট দেওয়া আছে, যার ফলে হেলমেটটি নিয়ে মোটরসাইকেলে না উঠলে স্টার্ট নেবে না। কোনো কারণে হেলমেটটি অকার্যকর হয়ে গেলে সে ক্ষেত্রে রিমোটের মাধ্যমে এটি স্টার্ট করা যাবে। এ রিমোটটি একইভাবে জুবায়ের তাঁর নিজস্ব কারিগরি মেধায় তৈরি করেছেন।

প্রায় প্রতিদিনই জুবায়েরকে এই মোটরসাইকেলযোগে শহর ও বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে দেখা গেছে। তাঁর মোটরসাইকেলটি কোথাও থামলে সব সময় উৎসুক মানুষ এটি ঘিরে ভিড় করে। প্রত্যেকেই তাঁর এ উদ্ভাবনকে সাধুবাদ জানিয়েছে।
জুবায়ের জানান, ঢাকার একটি ওয়ার্কশপে চাকরি করা অবস্থায় ২০০০ সালে সৌর ও বায়ু শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এ ধরনের মোটরসাইকেল তৈরির পরিকল্পনা তিনি মাথায় নেন। দীর্ঘদিন চেষ্টার পর গত বছর তিনি এটি তৈরি করতে সক্ষম হন। এটি তৈরিতে মোট খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। তবে ব্যাপক উৎপাদনে গেলে এটির খরচ অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব বলে তিনি দাবি করেন। এজন্য তিনি সরকারি কিংবা বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা আশা করেন। জুবায়ের জানান, তাঁর এ প্রযুক্তি নিয়ে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক জিয়াউর রহমানের কাছে গিয়েছিলেন। তিনি এটি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে গাড়ির ওজন কমানো, ডিজাইনে নতুনত্ব আনা ও গতি কিছুটা বাড়ানোর জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। [খবর: কালের কন্ঠের]

জুবায়েরকে আমাদের অভিনন্দন। সেই সাথে সরকার, বুয়েট, প্রগতি, এটলাস বাংলাদেশ, ওয়ালটন, মেশিন টুলস ফ্যাক্টরী সবার কাছে আহবান, ছোট দেখে হেলা করবেন না। এই বিশাল সৃষ্টিকে জনকল্যানে কাজে লাগান।

Source: Facebook

জ্বালানিবিহীন ইঞ্জিন তৈরির দ্বারে রাইহান

জ্বালানিবিহীন ইঞ্জিন তৈরির দ্বারে রাইহান

এমরানা আহমেদ
জ্বালানিবিহীন ইঞ্জিন তৈরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছেন বাংলাদেশী বিজ্ঞানী রাইহান উদ্দিন আহমেদ। তিনি তার সূত্রের একটি গাণিতিক ভিত্তি দাঁড় করিয়েছেন, যা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাস্তবসম্মত বলে স্বীকৃতি দিয়েছে।
রাইহান আহমেদের জ্বালানিবিহীন ইঞ্জিন মূলত দুটি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত।
একটি অংশ অরবিটকে, যা কক্ষপথের সঙ্গে এবং অপর অংশ ক্যারিয়েজকে, যা অক্ষের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। ১৬টি শ্যাফট একটার ওপর একটা নির্দিষ্ট মাপে সাজিয়ে গঠন করা হয়েছে ক্যারিয়েজ। ১৩টি গোলাকার ফিক্সচার ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে অরবিট। যন্ত্রে মোট দুটি অরবিটকে একটির ওপর আরেকটি সেট করা হয়েছে। প্রতিটি অরবিটের চার পাশে চারটি ক্যারিয়েজ স্থাপন করা হয়েছে। নিজস্ব ভর থেকে ঘুরে শক্তি উত্পাদন করবে ক্যারিয়েজ। ক্যারিয়েজের শক্তি ঘোরাবে অরবিটকে। পরে অরবিটের শক্তিকে বলবৃদ্ধি নীতি প্রয়োগ করে বাড়ানো হয়। এভাবে উত্পন্ন শক্তিতেই চলবে ইঞ্জিন। রাইহান আহমেদ জ্বালানিবিহীন ইঞ্জিন তৈরির সূত্রের যে গাণিতিক ভিত্তি দাঁড় করিয়েছেন তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ প্যাটেম্লট অফিস। অনেক যাচাই-বাছাই করে ঢাকা প্যাটেম্লট অফিস ২০০১ সালে এ প্রযুক্তিকে প্যাটেম্লট করাতে রাজি হয়। ২০০২ সালে এ প্যাটেম্লট গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান গাজীপুরের মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির পক্ষ থেকে রাইহান আহমেদের জ্বালানিবহীন ইঞ্জিন তৈরির সূত্র ও তার গাণিত্যিক ভিত্তিকে বাস্তবসম্মত বলে মত দেয়া হয়। প্যাটেন্টের নিয়মানুসারে এ প্রযুক্তি ২০০২ সালে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। গত আট বছরে বিশ্বের কোনো বিজ্ঞানী এ ধরনের ইঞ্জিন তৈরির সম্ভাব্যতা ও সূত্রের গাণিত্যিক ভিত্তি নিয়ে চ্যালেঞ্জ করেননি।
১৯৮৩ সালে জ্বালানিবিহীন ইঞ্জিন তৈরির চিন্তা মাথায় আসে রাইহান আহমেদের। তিনি প্রথমে জ্বালানিবিহীন ইঞ্জিন তৈরির একটি সূত্র তৈরি ও তার গাণিতিক ভিত্তি দাঁড় করালেন। সূত্রটি হচ্ছে, ‘প্রত্যেক বস্তুর ওজন তার একটি নিজস্ব শক্তি, যা ব্যবহার করে বস্তুটিকে গতিশীল করা যায়।’ তিনি তার সূত্রের নামকরণ করলেন ‘ল অব পার্টিকুলার মেথড’।
ইঞ্জিন তৈরির কাজ শুরু করতেই প্রয়োজন পড়ে বিপুল পরিমাণ অর্থের। গবেষণার প্রয়োজনে একে একে বিক্রি করে দেয়া হলো বেশিরভাগ জমাজমি। কিছু পার্টস তৈরি করতে বেশ কয়েকবার যেতে হয়েছিল ভারতের ওয়ার্কশপে। গবেষণার কাজ এগিয়ে নিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল তার বন্ধু আবু হানিফ। প্রযুক্তিটি জানাজানি হওয়ায় পাচার বন্ধ করতে সূত্র ও সূত্রের গাণিতিক ভিত্তি ২০০১ সালে ঢাকা প্যাটেম্লট অফিস থেকে প্যাটেম্লট করিয়ে নেয়া হয়।
রাইহান আহমেদ এ গবেষণার পেছনে তার প্রায় সব সম্পদ ব্যয় করেছেন।
সূত্র ও গাণিতিক ভিত্তি অনুসরণ করে তিনি একটি জ্বালানিবহীন ইঞ্জিন তৈরির কাজও অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছেন। তবে তার এই যন্ত্রের চূড়ান্ত রূপ দিতে এখন প্রয়োজন ন্যানো টেকনোলজির কম্পিউটারচালিত যন্ত্রপাতি এবং বিপুল অর্থের। এ দুটির কোনোটিই না থাকায় তার এ গবেষণাকর্ম এখন থেমে আছে।
রাইহান আহমেদ জানান, আমার বয়স হয়েছে। আমি চাই একদল তরুণ গবেষক এ গবেষণায় অংশ নিক। ইঞ্জিনের বিভিন্ন অংশ তৈরি করতে ন্যানো টেকনোলজির কম্পিউটারচালিত যন্ত্রের প্রয়োজন। অংশগুলোর মাপ সূক্ষ্মতম পরিমাণ কমবেশি হলে ইঞ্জিন কাজ করবে না। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাই কেবল পারে এ গবেষণাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে। এ গবেষণা থেকে আমি কোনো আর্থিক লাভ চাই না। আমি চাই বাংলাদেশ এগিয়ে যাক। জ্বালানিবিহীন ইঞ্জিন তৈরি সম্ভব হলে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের একটি বিস্ময় এবং প্রযুক্তিটির রয়্যালটি বাবত দেশ যা আয় করবে তাতে সমৃদ্ধ দেশ গড়া সম্ভব হবে বলে মনে করেন এই উদ্ভাবক।