Friday, June 8, 2012

বান্দরবানে দেশীয় প্রযুক্তিতে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু

বান্দরবানে দেশীয় প্রযুক্তিতে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু


িি

 বান্দরবান,নভেম্বর ১১:দেশীয় প্রযুক্তিতে ক্ষুদ্র জলবিদ্যুৎ প্রকল্প উদ্ভাবন করে বান্দরবানে আবারো আলোড়ন সৃষ্টি করলেন আদিবাসী বিজ্ঞানী অং থুই খয়।
 বান্দরবান কলিবিজ্ঞান ক্লাবের পরিচালক আমিনুল ইসলাম বাচ্চুসহ আরো ৫ জন নবীন বিজ্ঞানী একাজে কারিগরী সহায়তা দিয়েছেন।
 মাসব্যাপী গবেষণা চালানোর পর বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের লেকে গত মঙ্গলবার থেকে এই ক্ষুদ্র মডেলের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের পরীক্ষামুলক উৎপাদন শুরু হয়েছে।
প্রাথমিক ভাবে ৫শ’ থেকে ১ হাজার ওয়াট পর্যন্ত এ প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এতে ২৫টি এনার্জি বাল্ব জ্বালানো সম্ভব হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান বীর বাহাদুর এম.পি ইতিমধ্যে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প পরিদর্শন করেছেন।
 তিনি প্রকল্পের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে উদ্ভাবকের সাথে আলাপ করেন। এই সময় বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা, জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমানসহ জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন।
মাত্র ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ে এই ধরণের প্রকল্প দুর্গম পল্লীতে স্থাপন করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
 গ্যাভেটি ফ্লো সিষ্টেম বা জিএফএস প্রকল্পের সাথে এটি সংযুক্ত করা হলে পাহাড়ি ঝিড়ি ঝর্ণার প্রবাহমান পানি কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি একই সাথে জনগণের দুয়ারে পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
 যে সকল পাহাড়ি পল্লীর আশপাশে ঝর্ণাঝিড়ি রয়েছে সেই সকল পাড়াগুলোতে প্রকল্পের আওতায় পানিসরবরাহ সুবিধাসহ ও বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করা যাবে। ক্ষুদ্র আকারের এ প্রকল্পের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৩ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান বীর বাহাদুর এমপি বলেন, আদিবাসী উদ্ভাবকের এই ক্ষুদ্র বিদ্যুৎ প্রকল্পটি পার্বত্য এলাকায় বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারে। এটি পাহাড়ি অঞ্চলের জন্য খুবই ভাল প্রকল্প।
এ প্রকল্পকে সরকারী বেসরকারী উদ্যোগে সহযোগিতা করা হলে দুর্গম পল্লীগুলো বিদ্যুতের আওতায় আসবে এবং ছাত্রছাত্রীরা বিদ্যুতের আলোতে লেখাপড়ার সুযোগ পাবে। এতে সকল ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসবে। গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন হবে।
 জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান বলেন, পাহাড়ে বিদ্যুৎ ও পানির সমস্যা প্রকট। ক্ষুদ্র জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের মাধ্যমে পানি ব্যবহার করে একই সাথে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও পানি জনপদে সরবরাহ করার সুযোগ রযেছে।
 এ প্রকল্পটিকে আরো উন্নত করে গ্রামীণ এলাকায় স্থাপন করা হলে এটি পাহাড়ি এলাকায় বিপ্লব ঘটাতে পারে। আদিবাসী বিজ্ঞানী ও উদ্ভাবক অংথুই খয় মারমা বলেন, পাহাড়ের ঝিড়ি ঝর্ণার পানিকে কাজে লাগিয়ে স্বল্পখরচে এই ক্ষুদ্র জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরী করা যায়।
মাত্র ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা যায়। ২০০১ সালে এই ধরণের একটি প্রকল্প উদ্ভাবন করে তিনি আলোড়ন সৃষ্টি করলেও তাকে পৃষ্টপোষকা দেয়া হয়নি। বর্তমানে প্রকল্পটি নিয়ে ব্যাপক চিন্তাভাবনা করায় তিনি জেলা পরিষদের নিকট ধন্য।
তিনি দুর্গম এলাকায় এই প্রকল্পের সুফল পৌঁছে দিতে চান। জলবিদ্যুৎ প্রকল্প সমন্বয়কারী ও কলি বিজ্ঞান ক্লাব এর পরিচালক আমিনুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, একটি টীম ওয়ার্কের মাধ্যমে মাসব্যাপী গবেষণা কাজ চালিয়ে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি উদ্ভাবন করা হয়েছে।
 এর নির্মাণ কৌশল খুবই সহজ। দেশীয় প্রযুক্তিতে স্বল্প খরচের মাধ্যমে এই প্রকল্পটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এ প্রকল্পে ব্যবহৃত ডায়নামাসহ অন্যান্য মালামাল সমুহ নিজেস্ব প্রযুক্তিতে তৈরী
যন্ত্রের ভিতর বসানো ‘টারবাইন’ সামান্য ঘুরলেই বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়ে থাকে। এটি পাহাড়ি এলাকার দুর্গম অনেক পল্লীতেই স্থাপন করা যায়। বর্তমানে প্রকল্পটিকে মানানসই করতে কাজ শুরু হয়েছে।
এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জয়নাল আবেদীন জানান, এটি খুব সম্ভাবনাময় ক্ষুদ্র জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। প্রকল্প উদ্ভাবক অংথুই খয় মারমা এর মেধা ও তার গবেষণার ফসল মডেল হিসাবে ক্ষুদ্র জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি মানুষের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
 তাকে আমি ধন্যবাদ জানাই। এই প্রকল্পটিকে আরো টেকসই করার জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে পাহাড়ের যে সব এলাকা সরকারি বিদ্যুৎতায়ন করতে পারেনি সেই সব অঞ্চলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করে গ্রামীণ মানুষের মাঝে বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে সক্ষম হবে। এতে সারাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোর কাজে বিরাট ভূমিকা পালন করবে। 

 চবাথুই মারমা
Source: http://www.redtimesbd.com

No comments:

Post a Comment