মানবদেহে রহস্যময় বিদ্যুৎ
গভীর সমুদ্রের ইলেকট্রিক মাছের কথা আমরা জানি। 'ইলেকট্রিক রে' এবং
'ইলেকট্রিক ঈল' মাছের শরীরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা আছে। এটা ওদের বিশেষ
ক্ষমতা। আর এ ক্ষমতাকে ওরা ব্যবহার করে শত্রুর কাছ থেকে বাঁচতে এবং শিকার
করার কাজে। কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্য, মানব শরীরেও বিদ্যুৎ উৎপন্ন হতে
পারে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এ রকম অনেক উদাহরণ আছে। এটা মানব শরীরের
রহস্যময় এক ভয়াবহ অস্বাভাবিকতা। এটা হঠাৎ করেই কারো শরীরে উপস্থিত হতে পারে
আবার হঠাৎ করেই চলে যেতে পারে। পৃথিবীতে যে ক'জন মানুষ এই অস্বাভাবিকতা
প্রাপ্ত হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে একজন হলেন কানাডার ওন্টারিও শহরের ক্যারোলিন
ক্লেয়ার। একবার তিনি প্রচণ্ড- অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ডাক্তার নিশ্চিত হলেন,
ক্লেয়ার এক বছরের বেশি আর বাঁচবেন না। তার হাঁটাচলা বন্ধ ছিল। একদিন মনের
জোরে তিনি বিছানা ছাড়লেন এবং হেঁটে হেঁটে একটা চেয়ারের দিকে এগিয়ে গেলেন।
চেয়ারে হাত রাখা মাত্র তিনি চমকে উঠলেন এবং বুঝতে পারলেন তার শরীরে বিদ্যুৎ
প্রবাহিত হচ্ছে। ধপ করে বসে পড়লেন তিনি। নার্স ছুটে এলেন সাহায্য করতে।
কিন্তু প্রচন্ড শক খেয়ে ছিটকে পড়লেন দুরে। ডাক্তারদের মধ্যে হৈচৈ পড়ে গেল।
ক্যারোলিনের দেহ পরীক্ষা করে তারা সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের অস্তিত্ব নিশ্চিত
হলেন। জীবনটা তার দুর্বিষহ হয়ে উঠল। ধাতব কোনো কিছু তিনি স্পর্শ করতে
পারতেন না। তবে কিছুদিনের মধ্যেই তিনি এ সমস্যা থেকে মুক্তি পান এবং ধীরে
ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন।
বার্লিনের এক ছোট গাঁয়ের বালিকা জেনির জীবনেও
ঘটেছিল এমন একটি ঘটনা, যা তার স্বাভাবিক জীবনকে করেছিল ভয়ঙ্কর। জেনি ছিল
স্বাস্থ্যবতী স্বাভাবিক এক বালিকা। কিন্তু একদিন পানি আনতে গিয়ে টিউবওয়েলের
হ্যান্ডেলে তার হাত স্পর্শ করা মাত্র বিদ্যুতের স্ফুলিঙ্গ দেখা গেল। ভয়ে
মেয়েটি চিৎকার করে ওঠে এবং সে বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। পরিবারের সদস্যদের খুলে
বলতে পারে না কেন সে চিৎকার করে উঠেছিল। এরপর তার মা মেয়ের মাথায় হাত
রাখতেই প্রচন্ড শক খেলেন এবং বুঝতে পারলেন কেন তার মেয়ে চিৎকার করে উঠেছিল।
কিন্তু কী কারণে এমন হলো বুঝতে না পেরে জেনিকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে
যাওয়া হলো। ডাক্তাররা দেখলেন জেনির পুরো দেহে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হচ্ছে।
কিন্তু এর যৌক্তিক কোনো কারণ খুঁজে পেলেন না। মানব শরীর কেন হঠাৎ
বিদ্যুতায়িত হয় এর সঠিক কারণ চিকিৎসাবিজ্ঞান আজও খুঁজে পায়নি।
জেনি
মর্গান এবং ক্যারোলিন তাদের অস্বাভাবিক জীবন থেকে অল্পদিনেই সুস্থ
হয়েছিলেন। কিন্তু পাউলাইন শো নামের এক মহিলাকে সারাজীবন বইতে হয়েছিল এ
যন্ত্রণা। পাউলাইন বাস করতেন ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে। ৪৫ বছর বয়সে এ
মহিলা হঠাৎ একদিন অজ্ঞান হয়ে যান। শরীরে অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ প্রবাহের
কারণেই তিনি জ্ঞান হারান। তার স্বামী তাকে স্পর্শ করতে গিয়ে কয়েকবার শক
খেয়েছেন। তৃতীয় সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর তার এ অস্বাভাবিকতা শুরু হয়। তিনি
ধাতব কিছু স্পর্শ করলেই ঝলকে উঠত বিদ্যুৎস্ফুলিঙ্গ। দেহের এ অস্বাভাবিকতা
কারণে তার জীবনটা অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। ডাক্তাররা এ রহস্যময় রোগের কোনো চিকিৎসা
খুঁজে না পেয়ে শুধু দিনে তিনবার গোসল করার জন্য তাকে পরামর্শ দেন। আর পায়ের
গোড়ালিতে একটি তার লাগিয়ে দেওয়া হয় যেন তা সব সময় মাটি স্পর্শ করে থাকে।
কিন্তু এতকিছুর পরও পাউলাইন ফিরে পাননি তার স্বাভাবিক জীবন।
অক্সফোর্ড
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ড. মাইকেল শেলিস মনে করেন, দেহের এ ধরনের
বিদ্যুৎকে তারের মাধ্যমে মাটিতে নামিয়ে দেওয়া সম্ভব। মানবদেহে এ বৈদ্যুতিক
সমস্যা কেন হয়, তা কোনো বিজ্ঞানী আজও উদ্ঘাটন করতে পারেননি। কেউ কেউ মনে
করেন, ভিনগ্রহের চৌম্বক মানবদেহে এসে পড়লে এমনটি হতে পারে। যে যেভাবেই বলুক
না কেন, বিষয়টি আজও রহস্যজনক।
আনোয়ার হোসেন, দৈনিক সমকাল
Source: http://forum.projanmo.com
How to Publish a Book | Book Publish Course | 10 Minute School | Playlist
-
*Please Browse this link:*
*How to Publish a Book | Book Publish Course | 10 Minute School |
Playlist*
No comments:
Post a Comment