Monday, June 18, 2012

বায়ু বিদ্যুৎ

বায়ু বিদ্যুৎ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে


তিন পাখাবিশিষ্ট বায়ুকল
বায়ু বিদ্যুৎ, বায়ু শক্তি হতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ। বাযুপ্রবাহ হতে ঘোরা বিশাল আকারের পাখা দ্বারা টারবাইন ঘুরিয়ে এই বিদ্যুত উৎপাদন করা হয়। ২০০৮ সাল পর্যন্ত পৃখিবীব্যাপি ১২১.১ গিগাওয়াট বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের নথি পাওয়া যায়। পৃথিবীর মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ১.৫ শতাংশ বায়ুবিদ্যুৎ। পূণর্ব্যবহারোপযোগী ও জ্বালানিবিহীন হওয়ায় এর উৎপাদন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউরোপের ডেনমার্ক, জার্মান, স্পেন, পর্তুগাল, সুইডেন প্রভৃতি দেশে এর ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। মে ২০০৯ পর্যন্ত বিশ্বের ৮০টি দেশে বাণিজ্যিকভাবে বায়ুবিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে।
বায়ুর গতি ঘন্টাপ্রতি কমপক্ষে ৭-১০ মাইল হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।

কুতুবদিয়া বায়ু বিদ্যুৎ স্বপ্ন দেখাচ্ছে নতুন দিনের 

 

99989_1।। রফিকুল বাসার ও সারওয়ার সুমন কুতুবদিয়া থেকে ফিরে ।।
বাড়ছে বাতাস, ঘুরছে পাখা, জ্বলছে আলো। বিষয়টি এমনই। সমুদ্রের পাড়ে প্রাকৃতিক বাতাসে পাখা ঘুরছে। আর সেই পাখা ঘোরা থেকে তৈরী হচ্ছে বিদ্যুৎ। পরিষ্কার বা দূষণমুক্ত বিদ্যুৎ। উন্নত অনেক দেশের মতো বাংলাদেশ যুক্ত হলো এই বায়ু বিদ্যুতের যুগে। সমতলভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন সমুদ্র উপকূল কুতুবদিয়াতে স্থাপন করা হয়েছে এই বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
শুক্রবার বাংলাদেশের প্রথম এই বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকা সরেজমিন ঘুরে এর নানা তথ্য জানা গেছে। দীর্ঘদিন পরীক্ষা আর নানা আলোচনা-সমালোচনার পর ৩০শে মার্চ বাতাস থেকে উৎপাদন হওয়া বিদ্যুৎ মানুষের ঘরে গিয়ে আলো জ্বালানো শুরু করেছে। ছোট পরিসর। মাত্র এক মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার এই কেন্দ্র। ৫০ ফুট উচ্চতার ৫০টি বিশেষ খুঁটি বা টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটির মাথায় তিনটি করে পাখা। পাখাগুলো ১৪ ফুট লম্বা। সাথে জেনারেটর। পাখা ও জেনারেটর মিলে ১ দশমিক ২ টন ওজন।
সমুদ্র থেকে বাতাস আসছে। আর সেই বাতাসে পাখা ঘুরছে। এই পাখা ঘোরা থেকেই বিদ্যুৎ হচ্ছে। তবে সরাসরি এই বিদ্যুৎ গ্রাহককে দেয়া হচ্ছে না। প্রথমে ব্যাটারিতে জমা করা হচ্ছে। পরে সন্ধ্যায় সরবরাহ করা হচ্ছে।
বাতাসে যে পাখা ঘুরছে তা স্বয়ংক্রিয়। ব্যাটারির চার্জ পুরোপুরি হয়ে গেলে পাখা ঘোরা বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাটারির বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়ে গেলে আবার ঘুরতে থাকে পাখা। তবে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরাসরি দেয়া গেলে সমস্যা কিছুটা কম হতো। পাখা থেকে যে বিদ্যুৎ হচ্ছে তা প্রথমে রাখা হচ্ছে এক কিলোওয়াট ক্ষমতার একহাজার ব্যাটারিতে। পাখা থেকে আসছে বিকল্প বিদ্যুৎ (অল্ট্রানেটিভ কারেন্ট, এসি)। আটটি ইনভেটর আছে। সেখানে এসি থেকে ডাইরেক্ট কারেন্ট (ডিসি) হচ্ছে। এক হাজার ব্যাটারি থেকে এই ইনভেটরে বিভিন্ন ভোল্টের বিদ্যুৎ আসছে। সেখান থেকে আরো আটটি নিয়ন্ত্রক যন্ত্র (কন্ট্রোল প্যানেল) বিভিন্ন ভোল্টকে এক ভোল্টে পরিণত করছে। এখান থেকে দুইটি ট্রান্সফরমারের মাধ্যমে ১১হাজার ভোল্ট করে গ্রীডে চলে যাচ্ছে। সেখান থেকে গ্রাহকরা তাদের বাড়িতে বিদ্যুৎ পাচ্ছে।
কুতুবদিয়ার বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) তার নিজস্ব লাইন দিয়ে সরবরাহ করছে বিদ্যুৎ। কুতুবদিয়ায় ডিজেল চালিত ১৬০ কিলোওয়াট ও ২৫০ কিলোওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার দুটি বিদ্যুৎ ইউনিট আছে। কিন্তু ২৫০ কিলোওয়াট-এর ইউনিটটি গত দুমাস ধরে নষ্ট। ১৬০ কিলোওয়াটের মধ্যে উৎপাদন হয় ১০০ কিলোওয়াট। একই লাইনে বায়ু বিদ্যুৎ ও ডিজেল বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। যখন বায়ু বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় তখন ডিজেল চালিত যন্ত্র বন্ধ রাখা হয়। আবার ডিজেল বন্ধ রেখে বায়ু বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।
গ্রাহকরা অবশ্য প্রথমে যে আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিল সে আকাঙক্ষা মেটাতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। কারণ এক হাজার কিলোওয়াট বিদ্যুৎ বায়ু কেন্দ্র থেকে সরবরাহ করা যায়নি। এখনো ৪০০ থেকে ৬০০ কিলোওয়াট সরবরাহ করা হয়েছে। বায়ু ও ডিজেল মিলিয়ে প্রতিদিন সন্ধ্যায় ৩ থেকে ৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ দেয়া হচ্ছে কুতুবদিয়ায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পর পর দুটি ঝড়ে বেশ কিছু পাখা ভেঙ্গে যাওয়া ও কিছু কারিগরি সমস্যার কারণে পুরোপুরি উৎপাদন হয়নি। তবে খুব তাড়াতাড়ি এটা আবার পুরোপুরি উৎপাদনে যাবে।
সম্পূর্ণ পিডিবির নিজস্ব অর্থায়নে এই কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এর জন্য খরচ করা হয়েছে ৯ কোটি টাকা। ২০০৭ সালের এপ্রিল মাসে এটি স্থাপন কাজ শুরু করা হয়। ৯ মাসে শেষ হয়। চীন থেকে এই প্রযুক্তি আমদানি করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবেও তৈরী করা হয় কিছু অংশ। কেন্দ্র স্থাপন করতে যে খরচ হয়েছে তারপর আর কোন জ্বালানি খরচ নেই। শুধু পরিচালনার জন্য ৪ জন টেকনিশিয়ান প্রয়োজন হবে। যাদের দিতে হবে মাসিক বেতন।
প্যান এশিয়া পাওয়ার সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফজলুল রহমান বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পর উপদেষ্টা। আগামী মার্চ মাসে তিনি এই প্রকল্প পিডিবির কাছে হস্তান্তর করবেন। ফজলুল রহমান ইত্তেফাককে বলেন, অনেকে বলেন বাংলাদেশে বাতাস নেই। এখন প্রমাণ হয়েছে বাংলাদেশে প্রচুর বাতাস আছে। সাত বছর নিয়মিত চললে এর টাকা উঠে আসবে। কুতুবদিয়ার এই কেন্দ্রকে ঘিরে আরো ২০ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন। বলেন, আমাদের প্রায় ৭০০ কিলোমিটার উপকূলীয় এলাকায় সাশ্রয়ী এমন প্রকল্পে তৈরি করা সম্ভব আরো অন্তত ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। কক্সবাজার পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী সামসুল আলম বলেন, এটি খুব সম্ভাবনাময়ী প্রকল্প। আরো পরীক্ষা নিরীক্ষা হলে অন্য এলাকাতেও করা সম্ভব। বড়ঘোফ বাজার বণিক সমিতির সভাপতি ও বিআরডিবি চেয়ারম্যান জাফর আলম বলেন, বায়ু বিদ্যুতের আলোয় বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই করা যায় প্রয়োজনীয় সব কাজ। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগে পাখাগুলোকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। সমাধান করতে হবে কারিগরি ছোট-খাটো ত্রুটিগুলোও। আলী আকবর ডি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এটিএস নূরুল বসর চৌধুরী দিনে তিন চার ঘন্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছে বলে জানান। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কুতুবদিয়া অঞ্চলের আবাসিক প্রকৌশলী আজগর আলীও মনে করেন ঠিকঠাকভাবে পরিচালিত হলে বায়ু বিদ্যুৎ দিয়ে অনেক কিছুই করা সম্ভব। তিনি বলেন, ‘কুতুবদিয়ার প্রকল্পটি প্রথম হওয়ায় নতুন অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। পুরনো হতে হতে এসব সমস্যা ক্রমশ কমে আসবে বলেই আমার বিশ্বাস।বর্তমান প্রকল্পের সীমাবদ্ধতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সাগর পাড়ে পর্যাপ্ত বাতাস থাকলেও ব্যাটারীতে চার্জ দীর্ঘক্ষণ ধরে রাখা যাচ্ছে না। এজন্য কোটি টাকা দামের বুস্টারের প্রয়োজন থাকলেও প্রকল্প কর্মকর্তা তা এখনো লাগাননি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়েজ আহমদ বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পকে আদর্শ আখ্যা দিয়ে বলেন, যথাযথভাবে তত্ত্বাবধান করা দরকার। আমরা এ থেকে উপকার পাওয়া শুরু করেছি। ভবিষ্যতে আরো পাব বলে আশা করছি। শনিবার সন্ধ্যায় বায়ু বিদ্যুৎ থেকে তিন/চার ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
Source: http://digitalphulbari.blogspot.com


No comments:

Post a Comment