Tuesday, June 19, 2012

 বিদ্যুৎ উৎপাদন না বাড়িয়ে কিভাবে বাংলাদেশের যন্ত্রণাদায়ক বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করা যায়?

 বিদ্যুৎ উৎপাদন না বাড়িয়ে কিভাবে বাংলাদেশের যন্ত্রণাদায়ক বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করা যায়?

প্রথমেই বলে রাখি এই পোস্টটি একটি গবেষণামুলক পোস্ট যাতে বাংলাদেশের চলমান বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। অনুগ্রহপূর্বক সুদীর্ঘ ভূমিকাটুকু পড়বেন এবং শেষে আপনার নিজেস্ব মন্তব্যটি দিবেন।

বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান নিয়ামক। লোড শেডিং যা আমাদের দেশের সারা বছরের অনাকাংক্ষিত সঙ্গী। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে লোড শেডিং এর কারণে দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। আর তাই এর হাত থেকে বাঁচতে আমাদের প্রচেষ্টারও শেষ নেই । এখন গড়ে ৭-৮ ঘন্টা বিদ্যুৎ না থাকা বেশ স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিনত হয়েছে। তার চেয়ে বড় সমস্যা শৃঙ্খলহীন লোডশেডিং যা পিক আওয়ারে প্রতি ২০-৩০ মিনিট পর পর যাতায়াত করে থাকে । ফলে অসহ্য একটি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে । বর্তমান বাংলাদেশের এই জাতীয় সমস্যার কারনে বিদেশী অনেক প্রতিষ্ঠান এদেশ থেকে ব্যাবসা সম্প্রসারনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে এবং নিজেদের গুটিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে ফলে বিদেশী বিনিয়োগ কমে আসছে। যা আমাদের দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

কেন এই সমস্যা?
এই মারাত্মক সমস্যাটি সৃষ্টির প্রধান কারণ হচ্ছে সময়োপযোগী পদক্ষেপ না নেওয়া এবং দূরদর্শিতার অভাব। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও, ভাঙচুর হচ্ছে তার কারন বিশৃঙ্খল বিদ্যুৎ প্রনয়ন ব্যাবস্থা এবং সাধারন গ্রাহকের সাথে দূরত্ব বৃদ্ধি। ফলে দিনে অসংখ্য বার লোডশেডিং হচ্ছে। স্বভাবতই সাধারন গ্রাহক
রাগান্বিত হচ্ছেন। সত্যি বলতে কি আমিও এর ব্যাতিক্রম নই।  এছাড়াও আমাদের জাতীয় বাজেটের বিভিন্ন খাতে উচ্চ প্রত্যাশা এবং বাংলাদেশের ৫ বছর মেয়াদী সরকার ব্যাবস্থার কারনে দীর্ঘ মেয়াদী বিদ্যুৎ প্রকল্প গুলো সক্রিয় করন ও বাস্তবায়নের থেকে সরকার অনেকটা উদাসীন মনোভব দেখায়। ফলশ্রুতিতে বছরের পর বছর ধরে অবহেলায় এই প্রকল্প গুলো স্থবির হয়ে পরেছে। আপনি যদি বিদ্যুৎ বিভাগের কোন কর্মকর্তা হন তবে হয়তো ভাবছেন সুশৃঙ্খল বিদ্যুৎ প্রনয়ন ও গ্রাহকের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করলেই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? তবে আমি বলব নিশ্চয়ই, সঠিক ব্যাবস্থাপনার মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান করা যায় অনুগ্রহ করে বিস্তারিত পড়ুন।

যেভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে
বাংলাদেশের বিদ্যুৎবিভ্রাট কী পরিমাণ প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা আর বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। সম্প্রতি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সংবাদে জানতে পারলাম জাপান বাংলাদেশে বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে বিদ্যুৎ সমস্যাকে দায়ী করেছে আর করবেনাই বা কেন সত্যি কথা বলতে কি আমি যেই পোস্টটা লিখছি তা লিখতে পুরো ১ দিন সময় লেগেছে যাই হোক ফলে সরকার আলাদা ভাবে জাপান সিটি স্থাপন করার কথা বিবেচনা করছে। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে ব্যাবসা লাভজনক একথা কারো অজানা নয় কারন অন্যান্য দেশের তুলনায় এখানে শ্রমের মুল্য অনেক কম, অন্যান্য দেশের তুলনায় উচ্চ মানের সরকারি ট্যাক্স জটিলতা নেই এবং সরকারিভাবে অনেক সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে কিন্তু এত সব সুবিধা থাকার পরেও ব্যবসার মুল শক্তি বিদ্যুৎ সমস্যার কারনে শুধু জাপান নয় অনেক বিদেশী সংগঠন এদেশে ব্যাবসা সম্প্রসারনে নিরুৎসাহিত হতে বাধ্য হচ্ছে।

বিকল্প ব্যাবস্থার মাধ্যমে এর সমাধান কি সম্ভব?
বিকল্প ব্যাবস্থা হিসেবে প্রথমে সৌরবিদ্যুৎ এর কথা বলি, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ওয়াটের মূল্য প্রায় ২.০ ডলার। বিকল্পভাবে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করে আমাদের বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করারও অনেক জটিলতা রয়েছে কারণ বর্তমান মূল্যে এক মেগাওয়াট ডিজেল বা ফার্নেস অয়েলচালিত জেনারেটরের দাম প্রায় ৩.০-৩.৫ কোটি টাকা। এই মূলধনের খরচসহ ডিজেলচালিত জেনারেটরে বিদ্যুতের দাম পড়বে ১০-১২ অর্থাৎ বর্তমান পিডিবির বিদ্যুতের দামের গড়ে প্রায় তিন গুন এবং একই ভাবে গ্যাসের মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুৎ এর মূল্য বর্তমান মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি হবে। ফলে সরকারকে প্রচুর ভর্তুকি দিতে হবে। এছারাও অন্যের কাছ থেকে বিদ্যুৎ ধার করার একটি সম্ভাবনা রয়েছে কিন্তু আমাদের দেশের এক তৃতীয়াংশ বর্ডারের অবস্থান নিয়ে সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতেও বিদ্দুতের উৎপাদন পর্যাপ্ত নয়। তবে যতদূর জানি বর্তমান সরকার উচ্চ মূল্যে ভুটান ও ভারত থেকে বিদ্যুৎ নিচ্ছে।

বিদ্যুৎ সমস্যা লাঘবে করনীয় কি?
বাসায় সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ানো এবং সাধারন মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অপচয় রোধ করা গেলে বিদ্যুৎ সমস্যা কিছুটা লাঘব হবে কিন্তু তাতে করে অনিয়ন্ত্রিত ব্যাবস্থার কারনে বিদ্যুতের সুষম বণ্টন সম্ভব হবে না।

চলুন এখন সমাধানের জন্য মুল প্রসঙ্গে আসি আমাদের দেশের উৎপাদিত বিদ্যুৎ কিভাবে সুশৃঙ্খল ভাবে বণ্টন করা যায় এবং দিনে অসংখ্য বার লোডশেডিং এর হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়?
বর্তমান বিদ্যুৎ সমস্যায় সৃষ্ট জনদুর্ভোগ নিরসনের একটি মারাত্মক সমাধান রয়েছে। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য অনেক বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট বসিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন বাড়ানো একটি দীর্ঘ মেয়াদী ও প্রচুর ব্যয় সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু বিদ্যুত উৎপাদন না বাড়িয়ে উৎপাদিত বিদ্যুতের সঠিক বণ্টনের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে এক নিমেষেই পরিত্ত্রান পাওয়া সম্ভব

১, প্রথমে আমাদের প্রতিটি বৈদ্যুতিক প্ল্যান্টের উৎপাদন মাত্রা আলাদা ভাবে নির্ণয় করতে হবে।
২, আলাদাভাবে প্রতিটি বৈদ্যুতিক প্ল্যান্টের গ্রাহকসংখ্যা গননা করতে হবে।
৩, বিদ্যুৎ ব্যাবহারের সময়সীমা ( পিক আওয়ার ও অফ পিক আওয়ার ) সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে।
৪, External Electric Meter Maintaining Device যুক্ত করা
৫,গ্রাহকদের জন্য এক ধরনের Indoor Electric Meter Maintaining Device তৈরি করতে হবে।
6,সঠিকভাবে প্রক্রিয়াটিকে পরিচালনা করতে হবে।

প্রথমের তিনটি ধাপ সম্পর্কে বিদ্যুৎ বিভাগ খুব ভালভাবে দক্ষতার পরিচয় রাখেন। ৪ ও ৫ নম্বর ধাপটি নতুন কিন্তু ৬ নম্বর ধাপটি সঠিকভাবে পালন না করার জন্য সারা দেশের মানুষকে অনিয়ন্ত্রিত বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সন্মুখিন হতে হচ্ছে। তাই আমি যতটা সম্ভব সহজভাবে আপনার কাছে ৪,৫ ও ৬ নং ধাপগুলো উপস্থাপন করার চেষ্টা করছিঃ-

External Electric Meter Maintaining Device কি?
External Electric Meter Maintaining Device ( EEMMD )হচ্ছে একটি ডিভাইস যা একটি প্ল্যান্টের উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমান এবং গ্রাহক পর্যায়ে Indoor Electric Meter Maintaining Device এর মাধ্যমে ব্যাবহারের চাহিদাকে রিড করতে পারবে । অর্থাৎ কি পরিমান বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে এবং তার প্রেক্ষাপটে কতটুকু ব্যয় হচ্ছে সে সম্পর্কে External Electric Meter Maintaining Device স্পষ্ট ধারনা রাখবে।

Indoor Electric Meter Maintaining Device কি ?
Indoor Electric Meter Maintaining Device ( IEMMD ) হচ্ছে গ্রাহকের বর্তমান মিটারের সাথে যুক্ত একটি সাধারন ডিভাইস যা মুল প্লান্টে অবস্থিত EEMMD এর নির্দেশ অনুসরণ করবে এবং গ্রাহকের কাছে বিদ্যুৎ ব্যাবহারের সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা প্রেরন করবে। IEMMD তে ডিজিটাল সিগন্যাল বাতি ও একটি সুইচ থাকবে এটি দেখতে ডিজিটাল ঘড়ীর মত। গ্রহক EEMMD থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পিক আওয়ার এবং অফপিক আওয়ারে পছন্দ মত সময়ে লোডশেডিং নিতে পারবে।
EEMMD ও IEMMD এর মাধ্যমে কিভাবে বিদ্যুৎ এর সুষম বণ্টন করা যায়?
ধরি, আমাদের একটি প্ল্যান্ট “A” এর গ্রাহক সংখ্যা ১০০০০ জন এর জন্য প্রতিদিন ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদার বিপরীতে গড়ে ৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে অর্থাৎ প্রতিদিন এই প্লান্টে ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি দেখা দেয়। এই ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এর সময় ধরি টানা ১ ঘন্টা।
এখন এই ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি পুরনের জন্য এই ১০০০০ জন গ্রাহকের বাসায় IEMMD যুক্ত করা হল।
প্লান্টে অবস্থিত EEMMD ডিভাইসকে পিক আওয়ার এবং অফপিক আওয়ার সম্পর্কে ধারনা দেওয়া হল। ধরি, অফপিক আওয়ার রাত্রি ১২ টা থেকে সকাল ১১ টা পর্যন্ত এবং পিক আওয়ার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত্রি ১০ টা পর্যন্ত।
এখন EEMMD এই ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণের জন্য IEMMD ডিভাইসকে অর্থাৎ গ্রাহকের ডিভাইসকে পিক আওয়ারে গ্রাহকের পছন্দ মত সময়ে লোডশেডিং দেয়ার নির্দেশ দেবে। ইমারজেন্সি লাইটটি সবসময় গ্রাহককে বর্তমান চাহিদা সম্পর্কে হলুদ, সবুজ, লাল বাতির মাধ্যমে ধারনা দেবে। ধরুন বর্তমান রিজার্ভ বাড়ছে অর্থাৎ গ্রাহকের ডিভাইসে সবুজ বাতি, যখন চাহিদার পরিমান বাড়বে তখন হলুদ, এবং উৎপাদনের লক্ষমাত্রা অতিক্রম করলে লাল বাতি জ্বলবে। এতে করে স্বভাবতই একজন গ্রাহক জরুরী অবস্তায় বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের চেষ্টা করবে।
EEMMD
IEMMD গ্রাহকের স্ক্রিনঃ
অফপিক আওয়ার= ১ ঘন্টা
পিক আওয়ার=১ ঘণ্টা
ইমারজেন্সি= যেকোনো সময়
পাওয়ার= অন/অফ

সহজ কথায় আপনার IEMMD ডিভাইসে উল্লেখিত পিক আওয়ারে যদি ১ ঘন্টা উল্লেখ থাকে তবে পিক আওয়ারে আপনার পছন্দ মত সময়ে নির্দিষ্ট পরিমান ( EEMMD প্রদত্ত ) সময় ডিভাইসের পাওয়ার অফ করে লোডশেডিং দিতে বাধ্য থাকবেন। অন্যথায় স্বয়ংক্রিয় বর্তমান অবস্থার মত আপনার লোডশেডিং হবে। এছাড়াও ইমারজেন্সি ভাবে যেকোনো সময় IEMMD লোডশেডিং দিতে পারবে।

IEMMD এর সুবিধা কি?
১, এর মাধ্যমে আপনার ঘরে বিদ্যুৎ কখনো হটাৎ করে চলে যাবেনা।
২, আপনি আপনার পছন্দ মত সময়ে লোডশেডিং নিতে পারবেন।
৩, ব্যাবসায়ীরা তাদের কাজের সময় সম্পর্কে সচেতন থাকবে।
৪, বিদ্যুৎ সাস্রয়ে সকলেই সতর্ক হবে।
৫, বিদ্যুৎ অফিস ভাঙচুর ও বিশৃঙ্খলা কমে যাবে।
৬, আপনার ইলেক্ট্রনিক্সের জিনিসপত্রের আয়ু বাড়বে।
৭, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে উত্তপ্ত রাজনৈতিক অঙ্গন শান্ত হবে।
৮, ধীরে ধীরে জাতীয় গ্রেডে নতুন বিদ্যুৎ সংযোজন হলে তা আরও সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।
৯, অফ পিক আওয়ারে সৃষ্ট লোডশেডিংএ একটি ভাল রিজার্ভ গড়ে উঠবে যা কৃষি কাজ যেমন ডিপ, মোটার ও অন্যান্য কাজের জন্য সহায়ক হবে।
১০, পছন্দ মত সময়ে লোডশেডিং হলে শিল্প কারখানায় ঐ সময়ে পরিকল্পিত ভাবে ব্যাবস্থা নেওয়া যাবে যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।

এই এক পাতায় এত বড় একটি সমস্যার সমাধান বিস্তারিত ভাবে দেওয়ার অবকাশ নেই তার পড়েও চেষ্টা করলাম যতটুকু সম্ভব উপস্থাপন করার। আপনার এ সংক্রান্ত কোন মন্তব্য থাকলে নিম্নে লিখুন। আর ভাল লাগলে শেয়ার করুন।

সর্বশেষ আপডেট মঙ্গলবার, ০৫ জুন ২০১২ ১৫:১৪
Written by :
শাহ সুলতান রনি

Source: http://www.banglahili.com

No comments:

Post a Comment