Thursday, May 10, 2012

বিদ্যুৎ সংকটে আশার আলো মহসিনের বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প,নির্বাক সরকার!

বিদ্যুৎ সংকটে আশার আলো মহসিনের বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প,নির্বাক সরকার! 

প্রবাল আহমেদ,নিউজ এজেন্সি টোয়েন্টিফোর(নভেম্বর ২৪,বৃহস্পতিবার,ঢাকা)- হাত ভেঙ্গেছি কিন্তু মন ভাঙ্গেনি- কথাটি আপাত দৃষ্টিতে সহজ মনে হলেও এর মর্ম বুঝা সহজ নয়। কথাটি বলছিলেন বনসাই মহসিন। তার আসল নাম এস,এম মহসিনুল ইসলাম। তার জন্ম ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়া থানার আমুয়া গ্রামে। তিনি ১৯৮২ সালে এস,এস,সি পাস করার পর বুয়েট এ ড্রাইভার হিসেবে যোগ দেন।

নগরকেন্দ্রিক কৃষি বিপ্লবের ডাক দিয়ে সারা দেশ কাঁপিয়েছিলেন একসময় ।

ঢাকার খিলক্ষেতে নিজের প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেছেন বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প। বায়ু বিদ্যুতের চিন্তা কিভাবে আসল এ প্রশ্নের জবাবে তিনি নিউজ এজেন্সি টোয়েন্টিফোরকে বলেন,দুপুর বেলা নার্সারিতে পানি দিতেছিলাম। এমন সময় এক বন্ধু এসে বলল উইন্ড পাম্প বানাইয়া পানি দিতে পারস না। এরপর শুরু হল লোহা-লক্কর দিয়ে উইন্ড মিল বানানোর কাজ। পেশায় ড্রাইভার হওয়ায় এসব কাজ একটু ভাল বুঝতাম। তাছাড়া আমার প্রেরণা ডঃ আইনুন নিশাত স্যার(ভি,সি ব্রাক ইউনিভার্সিটি) আমাকে সব সময় সাহায্য করেছেন।
তিনি আরও বলেন,প্রধামন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠানোর কথা ভাবছিলাম। কতুবুদ্দিন সার জি-৩৮ বললেন, তোমার মডেল ভাল। সরকারের কাছে টাকা চাও। তখন ০৭-০৯-১১ তে সকারের কাছে লিখিত কাগজ পাঠাই। কিন্তু কাজ হল না। নিরাস হলাম না। হাত ভাঙ্গল ২১-১০-১১ তারিখে। হাসপাতাল থেকে আসলাম ২৩ এ। ২৪ তরিখে উইন্ড মিল বানানোর কাজ শেষ করলাম।
অবহেলিত এ মানুষটি বারবার নিঃস্ব হয়ছে। কিন্তু নিরাশ হননি,হারাননি ইচছা। তিনি বলেন, সরকার এক কোটি টাকা অনুদান দিলে আমি বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতে পারি। আশা করছি ৫০-৬০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে পারব। এ বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে সারা দেশে সরবরাহ করা সম্ভব। আমার প্রযুক্তির একটি বিশেষ দিক হল,যে কোন দিকের বাতাস কাজে লাগাতে সম্ভব এবং ঝড়ের মধ্যেও এ প্রকল্পের কোন ক্ষতি হবে না।
বায়ু বিদ্যুৎ বিস্ময় !
অনেকেই দেখেছেন খোলা মাঠে বা সমুদ্রে বড় বড় পাখা ঘুরছে। এগুলো দেখতে পাখার মত মনে হলে ও এগুলো থাকে সাধারনত ভার্টিক্যালি অর্থাৎ টেবিল ফ্যানের মত করে। এত বড় পাখা দিয়ে হয়টা কি? এগুলো আসলে উইন্ড টারবাইন/উইন্ড জেনারেটর বা বায়ু বিদ্যুৎ । বায়ুপ্রবাহ হতে ঘোরা বৃহৎ আকারের পাখা দ্বারা টারবাইন ঘুরিয়ে এই বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
বায়ু বিদ্যুৎ কি?
বায়ু বিদ্যুৎ, বায়ু শক্তি হতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ। বায়ুপ্রবাহ হতে ঘোরা বিশাল আকারের পাখা দ্বারা টারবাইন ঘুরিয়ে এই বিদ্যুত উৎপাদন করা হয়। ২০০৮ সাল পর্যন্ত পৃখিবীব্যাপি ১২১.১ গিগাওয়াট বায়ুুবিদ্যুৎ উৎপাদনের নথি পাওয়া যায় । পৃথিবীর মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ১.৫ শতাংশ বায়ুবিদ্যুৎ। পূণর্ব্যবহারোপযোগী ও জ্বালানিবিহীন হওয়ায় এর উৎপাদন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউরোপের ডেনমার্ক, জার্মান, স্পেন, পর্তুগাল, সুইডেন প্রভৃতি দেশে এর ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। মে ২০০৯ পর্যন্ত বিশ্বের ৮০টি দেশে বাণিজ্যিকভাবে বায়ুুবিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে।
বায়ুর গতি ঘন্টাপ্রতি কমপক্ষে ৭-১০ মাইল হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।
বাংলাদেশে কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া দ্বীপে পিডিবি ১টা উইন্ড টারবাইন প্রকল্প চালু করেছিল। যদিও খুব অল্প সময়ই স্থায়ী হয় এই প্রকল্প।
বায়ু বিদ্যুতের সুবিধা
এই বিদ্যুৎ এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল একবার বসান হলে এর রক্ষনাবেক্ষন ছাড়া আর কোন খরচ নেই। বায়ুুতে চলে বলে এর কোন জ্বালানী খরচ নেই।
কোথায় উৎপন্ন হয়?
বায়ুুর গতি কমপক্ষে ৭-১০ এমপিএইচ(মাইল পার আওয়ার) হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। খোলা জায়গা,মাঠ,নদীর মোহনা,পাহাড়ের বা টিলার চূড়ায় ইত্যাদি।
প্রকৌশলী ফজলুর রহমান নিউজ এজেন্সি টোয়েন্টিফোরকে বলেন, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ২৫ মিটার উচ্চতায় বাতাসের গতিবেগ ১০০ থেকে ২৫০ কি.ও. বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম মাঝারী ধরণের বায়ুকল চালানোর জন্য যথেষ্ট। ৫০ মিটার উচ্চতায় ২৫ কি.ও. থেকে এক মে.ও. ক্ষমতা সম্পন্ন বড় ধরণের কল স্থাপন সম্ভব।

বাংলাদেশে বায়ু বিদ্যুতের সম্ভাবনা
প্রাথমিক এক জরিপে বলা হয়েছে বাংলাদেশের উপকূলের বাতাস থেকে ২০ হাজার মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে। ভারত বর্তমানে উপকূলীয় এলাকা থেকে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় যেমন বাতাস ভারতীয় উপকূলেও তেমনই বাতাস আছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন নিউজ এজেন্সি টোয়েন্টিফোরকে বলেন, কারো মতে দেশে বায়ু বিদ্যুতের সম্ভাবনা নেই। আবার কেউ বলেন প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। একটি পরিপূর্ণ উইন্ড ম্যাপ থাকলে এটা স্পষ্ট বলা সম্ভব হতো বাংলাদেশে কতটুকু বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব, কোন কোন অঞ্চল বায়ুভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ভালো।
তিনি আরও বলেন, কক্সবাজারে বছরের অধিকাংশ সময়ই বাতাসের গতিবেগ বেশি থাকে। এই বাতাসকে কাজে লাগিয়ে কক্সবাজার শহর তথা উপকূলীয় এলাকায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব। এতে উপকূলীয় এলাকার মানুষের জীবন-মান ও অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এবং প্রতিবেশী দেশ ভারতের বাতাসের গতি প্রবাহ একই রকম। কিন' ভারত তাদের বাতাসকে কাজে লাগিয়ে ১২০০ মে.ও. বায়ু বিদ্যুৎ উৎপন্ন করছে। বাংলাদেশও একই সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বাতাসকে কাজে লাগানো হচ্ছে না। তার মতে, বাংলাদেশ উপকূলের সরল রৈখিক দৈর্ঘ্য প্রায় ৭৪০ কি.মি। আর আকাঁবাকাঁ প্রায় ১২০০ কি.মি.। এসব এলাকার ১০ কি.মি. ভেতরে পর্যন্ত বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকে। তাই বিশাল এই উপকূলীয় এলাকার বাতাসকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা যায়।
বহির্বিশ্বে বায়ু বিদ্যুতের ব্যাবহার
ইউরোপের ডেনমার্ক, জার্মান, স্পেন, পর্তুগাল, সুইডেন প্রভৃতি দেশে এর ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে।
২০০৮সাল পর্যন্ত পৃখিবী ব্যাপি ১২১.১ গিগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড পাওয়া যায় । পৃথিবীর মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ১.৫% বায়ু বিদ্যুৎ। পূনব্যবহার ও জ্বালানিবিহীন হওয়ায় এর উৎপাদন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
টার্গেট-২০৩০’৷ এই সময়ের মধ্যেই ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ জার্মানি সমুদ্র প্রান্তিক বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে উৎপাদন করতে চায় ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ।
পরিকল্পনা অনুসারে ২০২০ সাল নাগাদ ইউরোপে উৎপাদিত মোট বিদ্যুতের ১৬ ভাগেরও বেশি আসবে বায়ু বিদ্যুৎ থেকে। আর এই সমুদ্র প্রান্তিক বায়ু বিদ্যুৎ ইউনিট স্থাপনের কাজেই কেবল ব্যয় হবে ৫৭ বিলিয়ন ইউরো। তাই ইউরোপীয় উইন্ড এনার্জি এসোসিয়েশনের প্রধান ক্রিষ্টিয়ান কাজেয়ার ইইউভুক্ত সকল দেশের প্রতি বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে আরও সহায়তার দেয়ার ঘোষণা দেবার আহ্বান জানিয়েছেন।


একজন মানুষের ক্ষুদ্র প্রয়াসে যদি তৈরি হতে পারে বিদ্যুৎ তবে সরকার কেন পারে না?এই প্রশ্ন সবার মনে।
সরকারের স্বদিচ্ছার অভাবে এ রকম সম্ভাবনাময় একটি বিদ্যুৎ উৎস দেশ কাজে লাগাতে পারছে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
অথচ নেপাল থেকে বিদ্যুৎ কেনার ইচছা প্রকাশ করে দেশের টাকা বিদেশীদের হাতে তুলে দিতে পিছপা হচ্ছে না বর্তমান সরকার। বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণে অনেক ভিত্তিহীন পরিকল্পনাই গ্রহণ করছে সরকার। অথচ হাতের কাছেই রয়েছে সেই অপূর্ব সমাধান।
কক্সবাজার তথা বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার বাতাসের গতিকে কাজে লাগিয়ে যে সম্ভাবনার হাতছানি তা কাজে লাগানোর সময় এখনই।

 Source: http://www.newsagency24.com

No comments:

Post a Comment