Thursday, May 3, 2012

ডিজেল জেনারেটরকে গ্যাস জেনারেটরে রূপান্তরের সুবিধা

ডিজেল জেনারেটরকে গ্যাস জেনারেটরে রূপান্তরের সুবিধা

- মীর মহিউদ্দিন | তারিখ: ০৯-১০-২০১১

 
দেশের বড় কলকারখানা থেকে শুরু করে আধুনিক ভবনগুলোতে বিকল্প বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ডিজেল জেনারেটর ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্তমানে ডিজেলের দাম বেশি হওয়ায় জেনারেটর ব্যবহারকারীরা প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছেন। প্রকৌশলীরা অনেক দিন থেকে ডিজেলের পরিবর্তে গ্যাস ব্যবহারের কথা চিন্তা করে আসছেন, যার ফল গ্যাস জেনারেটরের আবিষ্কার। প্রাথমিক অবস্থায় একই ধারণক্ষমতার একটি গ্যাস জেনারেটরের মূল্য একটি ডিজেল জেনারেটরের দ্বিগুণ।
প্রকৌশলীরা অনেক গবেষণা করে ডিজেল জেনারেটরকে গ্যাস জেনারেটরে রূপান্তর করেছেন দুইভাবে। ইঞ্জিনের পিস্টনকে ওপরের দিক থেকে ক্ষয়প্রাপ্ত করে কমপ্রেশন রেশিও কমিয়ে ও ডিজেল ফুয়েল ইনজেক্টরগুলোতে স্পার্ক প্লাগ ব্যবহার এবং একটি ডিস্ট্রিবিউটরের মাধ্যমে পরিবর্তন করে ইঞ্জিনের কনভার্সন সম্ভব। এ ক্ষেত্রে একটি ৫০০ কেভিএ জেনারেটরের খরচ হয় প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। প্রাইম পাওয়ারে খুব সহজেই এ জেনারেটরকে ফুললোডে চালানো যায়। কুলিং সিস্টেম ব্যবহার করে কন্টিনিউয়াস রেটিংয়েও চালানো সম্ভব।
আর একটি উপায় হলো, ডুয়েল ফুয়েল ব্যবহার করে অর্থাৎ জেনারেটরটির কোনো কিছু পরিবর্তন না করে শুধু একটি মিক্সার বক্স এবং প্রেসার রিডিউসিং ডিভাইস সংযুক্ত করে গ্যাসের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ৮০ শতাংশ গ্যাস ও ২০ শতাংশ ডিজেলের মাধ্যমে জেনারেটরটি ফুল লোডে চালানো সম্ভব। জেনারেটরটির মেকানিক্যাল গভর্নর হলে গভর্নরটি অ্যাডজাস্ট করে ২০ শতাংশ ডিজেল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। অন্যথায় ইসিএম কন্ট্রোলড হলে সরাসরি নিয়ন্ত্রিত হবে ২০ শতাংশ।
বর্তমানে নতুনভাবে গ্যাস ব্যবহারের জন্য কোনো সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্যাস কর্তৃপক্ষের নিষেধ রয়েছে। অনুমতি থাকলে সরাসরি গ্যাসের লাইন ৫-১০ পিএসআইয়ে কানেকশন দেওয়া যায়। লাইনে গ্যাস না থাকলে সিএনজি ব্যবহার করা যায়। একটি ৩০০ কেভিএ জেনারেটরে যদি ঘণ্টায় ৪৫ লিটার ডিজেলের প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে সিএনজি ব্যবহার করলে ডিজেলের ব্যবহার ৮০ শতাংশ কমে ডিজেলের প্রয়োজন হয় ৪৫  ০.২ = ৯ লিটার। ডিজেল থেকে সাশ্রয় হচ্ছে (৪৫ - ৯)  ৫১ = ১৮৩৬ টাকা। অন্যদিকে ঘণ্টায় সিএনজি গ্যাসের প্রয়োজন হয় (৩৬ ১.৩)  ৩০ টাকা = ১৪০৪ টাকা (১.৩ ঘন মিটার গ্যাস = ১ লিটার ফুয়েল) + ২০ শতাংশ ডিজেল (৯  ৫১) = ৪৫৯ টাকা সর্বমোট ১৮৬৩ টাকা। জেনারেটরটি যদি শুধু ডিজেলে চলত তাহলে খরচ হতো (৪৫  ৫১) = ২২৯৫ টাকা। ঘণ্টায় সাশ্রয় হতো (২২৯৫ - ১৮৬৩) = ৪৩২ টাকা। অর্থাৎ তেলের হিসাবে ঘন্টায় (৪৩২  ৫১) = ৮.৪৭ লিটার তেল কম ব্যবহার হচ্ছে। জেনারেটরটি দিনে ছয় ঘণ্টা চললে সাশ্রয় হবে ৬  ৮.৪৭ = ৫০.৮২ লিটার তেল, যার মূল্য প্রায় ২৫৯২ টাকা। ৩০ দিনে সাশ্রয় হবে (৩০  ২৫৯২) = ৭৭,৭৬০ টাকা (প্রতি দিন ছয় ঘণ্টা করে চললে)।
আপনি যদি গ্যাস কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে জেনারেটর চালাতে পারেন, তাহলে খরচ অস্বাভাবিক কমে যাবে। ৮০ শতাংশ গ্যাস (৩৬  ১.৩  ৫.৫) = ২৫৭.৪ টাকা (এক ঘনমিটার গ্যাস = ৫.৫ টাকা) + ২০ শতাংশ ডিজেল ৯  ৫১ = ৪৫৯ টাকা অর্থাৎ সর্বমোট প্রতিঘণ্টায় খরচ হবে ৭১৬.৪ টাকা মাত্র। এ ক্ষেত্রে ঘণ্টায় সাশ্রয় হচ্ছে (২২৯৫ - ৭১৬.৪) = ১,৫৭৮.৬ টাকা। গ্যাস ব্যবহার করে প্রতিদিন ছয় ঘণ্টা জেনারেটর চললে মাসে (১৫৭৮.৬  ৬  ৩০) = ২,৮৪,১৪৮ টাকা সাশ্রয় সম্ভব।
২টি সিলিন্ডারসহ দ্বিতীয় কনভার্সনটি করতে খরচ হয় দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ ধরনের কনভার্সন সিএনজি ফুয়েল স্টেশনগুলোর জন্য খুবই উপযোগী। কারণ, তাদের গ্যাসের ক্রয়মূল আরও কম থাকে।
বর্তমানে কিছুসংখ্যক নতুন গ্যাস ফিল্ড চালু হওয়ার ফলে খুব শিগগিরই জেনারেটরে গ্যাসের ব্যবহার করা সম্ভব। জেনারেটরে গ্যাসের ব্যবহার বাড়ানো সম্ভব হলে জেনারেটর ব্যবহারকারীরা অস্বাভাবিক সাশ্রয়ী হতে পারবে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, ডিপার্টমেন্ট অব মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।

Source: http://www.prothom-alo.com

 

No comments:

Post a Comment