Friday, May 4, 2012

সৌর কোষ

সৌর কোষ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

সৌর কোষ (বা সোলার সেল, Solar Cell) এক ধরণের সরঞ্জাম যা সূ্র্য্যের আলোক শক্তিকে আলোক-বিভব ক্রিয়ার (Photovoltaic Effect) মাধ্যমে বিদ্যুত শক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারে। অনুরূপ যেসব কোষ সূর্য্য ছাড়া অন্য উৎস থেকে আলোক শক্তি সংগ্রহ করে তাদের ক্ষেত্রে 'আলোক-বিভব কোষ' পদটি ব্যবহার করা হয়। 

সিলিকনের তৈরি সৌর কোষ

সৌর কৌষের ইতিহাস

'ফটোভোল্টেইক' শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ φῶς (ফস) যার অর্থ "আলো", এবং "ভোল্টেইক", যার অর্থ বিদ্যুত, এসেছে ইতালিয়ান পদার্থবিজ্ঞানী অ্যালেসান্ড্রো ভোল্টা নাম থেকে, যার থেকে তড়িতচ্চালক শক্তির একক ভোল্টের নামকরণও হয়েছে।এই শব্দ "ফটো-ভোল্টায়িক" ১৮৪৯ সাল থেকে ইংরেজি ভাষায় ব্যবহার করা হচ্ছে[১] ১৮৮৮ সালে রাশিয়ান পদার্থ বিজ্ঞানী আলেক্সান্ডর স্টলতভ প্রথম ফটোইলেকট্রিক কোষ তৈরি করেন (মূল ভিত্তি ছিল বহিঃস্থ ফটো ইলেকট্রিক ইফেক্ট যা আবিষ্কার করেছিলেন হেইনরিচ হার্জ ১৮৮৭ সালের প্রথম দিকে)। অ্যালবার্ট আইনস্টাইন ফটোইলেকট্রিক ইফেক্টকে ব্যাখা করেন ১৯০৫ সালে যার জন্য তিনি নোবেল পুরস্কার পান পদার্থবিজ্ঞানে ১৯২১ সালে।রাসেল ওহল ১৯৪৬ সালে আধুনিক সংযোগ অর্ধপরিবাহী সৌর কোষের প্যাটেন্ট করেন ১৯৪৬ সালে,[২] যা আবিষ্কৃত হয় যখন তিনি কাজ করছিলেন ট্রানজিস্টরের উন্নতির জন্য।

ইতিহাস

যদিও সৌর কোষ আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণার অন্যতম বিষয়, এর ইতিহাস বেশ পুরনো। ১৮৩৯ সালে ফরাসী পদার্থবিজ্ঞানী বেকরেল সর্বপ্রথম আলোক-বিভব ক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেন। একে ব্যবহার করে ১৮৮৩ সালে সোনার প্রলেপ দেওয়া অর্ধপরিবাহি সেলেনিয়াম থেকে প্রথম সৌর কোষ তৈরি করেন চার্লস ফ্রিটস। এর কর্মক্ষমতা (Efficiency) ছিল মাত্র ১%। প্রথম সেমিকন্ডাকটর-জাংশন সৌর কোষ তৈরি হয় ১৯৪৬ সালে, যার উদ্ভাবক ছিলেন রাসেল ওল [৩]। তবে আধুনিক সৌর কোষ প্রযুক্তির জন্ম ১৯৫৬ সালে, আমেরিকার বেল ল্যাবরেটরিতে। ড্যারিল চ্যাপলিন, কেল্ভিন ফুলার ও জেরাল্ড পিইয়ারসন উদ্ভাবিত এই কষের কর্মক্ষমতা ছিল ৬% এর কাছাকাছি [৪]। ১৯৫৮ সালে উৎক্ষেপিত ভ্যানগার্ড-১ ছিল প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ যাতে সৌর কোষ ব্যবহৃত হয়।
১৯৭০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের জরেস আলফারভ ও তার সহকর্মীরা তৈরি করেন উচ্চ কার্যক্ষম হেটেরো-স্ট্রাকচার সৌর কোষ। ১৯৮৮ সালে আমেরিকার এপ্লাইড সোলার এনার্জি করপোরেশন (ASEC) তৈরি করে গ্যালিয়াম-আর্সেনাইডের দ্বৈত জাংশন কোষ যার কার্যক্ষমতা ছিল প্রায় ১৭%। পরবর্তী এক দশকে ASEC তাদের কোষের কার্যক্ষমতা উন্নীত করে ২০%-এ। এই কোষগুলো আমেরিকান মহাকাশযানগুলোতে ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ২০০৭ সাল নাগাদ এই প্রযুক্তি ত্রি-জাংশন পর্যায়ে উন্নীত হয় ও প্রায় ৩০% কার্যক্ষমতা লাভ করে।
২০০০ দশকে সৌর কোষ প্রযুক্তির ব্যপক উন্নয়ন ঘটে এবং কোষের মৌলিক গঠনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হয়। প্রচলিত সৌর কোষেগুলোর গঠন ও উপাদানের ভিন্নতা বিবেচনায় এদের তিনটি প্রজন্মে ভাগ করা যায়।

প্রথম প্রজন্ম

প্রথম প্রজন্মের সৌর কোষগুলো অতি উচ্চমানের সেমিন্ডাকটর জাংশনের তৈরী, আকারে বড়, কিন্তু উচচ কার্যক্ষম। তাত্ত্বিক হিসেবে দেখা যায় এর সর্বোচ্চ কার্যক্ষমতা ৩১%[৫] এবং এ ধরণের আধুনিক কোষগুলোর কার্যক্ষমতা এ মানের কাছাকাছি।

দ্বিতীয় প্রজন্ম

এ প্রজন্মের সৌর কোষগুলো সস্তা, কিন্তু নিম্ন কর্মক্ষমতাসম্পন্ন (১২-২০%)। এরা পাতলা সর (থিন ফিল্ম) প্রযুক্তিতে তৈরী। বহুল প্রচলিত উপাদাঙ্গুলোর মধ্যে আছে ক্যাডমিয়াম টেলুরাইড (CdTe), দানাদার সিলিকন ও কপার-ইন্ডিয়াম-গ্যালিয়াম-সেলেনাইড (CIGS).

তৃতীয় প্রজন্ম

তৃতীয় প্রজন্মের কোষ মূলত দ্বিতীয় প্রজন্মের কোষগুলোর উন্নত সংস্করণ। এদের মধ্যে আছে ডাই-সংবেদী কোষ, ন্যানোসিলিকন কোষ ইত্যাদি।

বেল প্রথম তৈরি করে ব্যবহারিক সৌরকোষ

আধুনিক ফটোভোল্টায়িক কোষ ১৯৫৪ সালে প্রথম বেল গবেষণাগারে প্রস্তুত করা হয়[৬] উচ্চ মাত্রার সৌর কোষ প্রথম উন্নতকরণ করেন ডারেল চ্যাপলিন, কেল্ভিন সাউথার ফুলার এবং গিরাল্ড পিয়ারসন ১৯৫৪ সালে একটি ব্যাপনকৃত পি–এন সংযোগ ব্যবহার করে[৭] প্রথম দিকে এই কোষগুলো খেলনা এবং অন্যান্য ছোটখাট কাজে ব্যবহার করা হত, যেহেতু তাদের প্রস্তুত করা বিদ্যুতের দাম ছিল তুলনামূলকভাবে অনেক বেশী; ১ ওয়াটের বৈদ্যুতিক ক্ষমতা তৈরিতে খরভ পড়ত প্রায় $২৫০, যেখানে কয়লা প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুত পাওয়া যেত মাত্র ২ থেকে $৩ ডলারে।

প্রয়োগসমূহ

পলিক্রিস্টালাইন ফটোভোল্টায়িক কোষকে একটি মডিউলের পেছনের পদার্থ হিসেবে প্রলেপ দেওয়া হয়
পলিক্রিস্টালাইন ফটোভোল্টায়িক কোষ
সৌর কোষগুলোকে মাঝে মাঝে বৈদ্যুতিকভাবে সংযুক্ত করা হয় এবং একটি মডিউল হিসেবে একটা ক্যাপসুলে বদ্ধ করা হয় । ফটোভোল্টায়িক মডিউলে প্রায়ই একটি গ্লাসের টুকরা থাকে সম্মুখ দিকে (যেখানে সূর্যের আলো পড়বে), যা আলোকে যেতে দেয় অর্ধপরিবাহী ওয়েফারকে ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়া থেকে রক্ষা করতে এবং বাতাস, বৃষ্টি,শিলাবৃষ্টির প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে।সৌর কোষগুলোকে সাধারণত সিরিজ এবং সমান্তরালভাবে মডিউলে যুক্ত করা হয়, একটি অতিরিক্ত বিভব সৃষ্টি করে।সমান্তরালে সংযোগকৃত কোষে উচ্চমাত্রার বিদ্যুত থাকে।মডিউলগুলো তখন পরস্পরের সাথে সংযুক্ত থাকে সিরিজ বা সমান্তরালে বা উভয় প্রকারে , আকাংখিত শীর্ষ ডিসি বিভব এবং বিদ্যুত প্রবাহের সঙ্গে একটা সজ্জা সৃষ্টি করতে ।
ব্যবহারিক ভাবে সূর্য থেকে প্রাপ্ত শক্তিকে গ্রীড সংযুক্ত ইনভার্টারের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক গ্রীডে যুক্ত করা হয়; একটি একক ব্যবস্থাতে, ব্যাটারী ব্যবহার করা হয় শক্তিকে জমিয়ে রাখতে যা সাথে সাথে প্রয়োজন হয় না।সৌরশক্তিকে ব্যবহার করা যেতে পারে বহনযোগ্য যন্ত্রকে রিচার্জ করার ক্ষেত্রে।

তত্ত্ব

সৌর কোষ তিনটি ধাপে কাজ করে:
  1. সূর্যের আলোফোটন সোলার প্যানেলকে আঘাত করে এবং তা অর্ধপরিবাহী পদার্থের মাধ্যমে শোষিত হয় যেমন- সিলিকন।
  2. ইলেকট্রন (ঋণাত্নকভাবে চার্জিত) তাদের পরমাণু থেকে বেরিয়ে যায়, যা সারা পদার্থে প্রবাহিত হতে থাকে বিদ্যুত উৎপন্ন করার জন্য।বিশেষ সজ্জার সৌর কোষে, ইলেকট্রনকে একটি নির্দিষ্ট দিকে যেতে দেওয়া হয়।
  3. সৌর কোষের একটি সজ্জা রূপান্তর করে সৌরশক্তিকে ব্যবহার যোগ্য পরিমাণের ডিসি বিদ্যুতে।

No comments:

Post a Comment