Wednesday, May 9, 2012

ওয়াশিং পাউডার ব্যবহার না করার ওয়াশিং মেশিন

ওয়াশিং পাউডার ব্যবহার না করার ওয়াশিং মেশিন 

ওয়াংশিং মেশিনে কি দিয়ে কাপড়গুলো পরিষ্কার করা যায়। তা সবাই জানে, ওয়াশিং পাউডার। কিন্তু এখন চীনের বাজারে এক রকম ওয়াশিং মেশিন আছে, তাতে ওয়াশিং পাউডার না দিলেও কাপড়গুলো পরিষ্কার করা যাবে।
    আমাদের সংবাদদাতা পেইচিংয়ের একটি বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি দোকানে এই নতুন ওয়াশিং মেশিন দেখেছেন। তা ৬০ সেন্টিমিটার লম্বা, ৫০ সেন্টিমিটার চড়া এবং ৯০ সেন্টিমিটার উঁচু। তার গায়ের রং রুপালি, এবং ঢাকনার রং নীল, দেখতে খুব সুন্দর ও মর্জিত। এই মেশিন শুধু সুন্দর নয়, তার অস্বাভাবিক সামর্থ্যও আছে।
    বিক্রেতা তার অলৌকিক দৃক্ষতা সংবাদদাতাকে দেখিয়েছেন। তিনি একটি সাদা গামছার উপর কোকাকোলা, সোয়া সোসিজ, ভিনিগার ইত্যাদি জিনিষ ছিটিয়েছেন, তারপর গামছাটি পানি ভরা ওয়াশিং মেশিনে দিয়েছেন। কয়েক মিনিটের পর, নোংরা গামছাটি যাদুখেলার মতো একেবারে পরিষ্কার হয়েছে। কেমন হয়েছে এভাবে? এই প্রশ্ন নিয়ে আমাদের সংবাদদাতা এই ওয়াশিং মেশিনের উত্পাদক শিল্পপ্রতিষ্ঠান হাইয়ার কোম্পানিতে গিয়েছেন। এই মেশিনটির উদ্ভাবক মিস্টার লুই ফেই শি এই দুর্বোধ্য প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন।
    "এই ওয়াশিং মেশিনটির কাঠামো অন্যান্য মেশিন থেকে ভিন্ন। তার প্রধান অংশ হলো ইলেকট্রোবাথ। এই ইলেক্টোবাথ থাকার সুবাদে ওয়াশিং পাউডার ব্যবহার না করে কাপড় ধোয়া যায়।"
    মিস্টার লুই জানিয়েছেন, ইলেকট্রবাথ দিয়ে পানিকে এলকালেসেন্ট পানিতে পরিণত করা যায়। পক্ষান্তরে কাপড়ের নোংরা জিনিস প্রাধনত ক্যাবাসিডিটি প্রকৃতির। একসঙ্গে মিশে গেলে রাসায়নিক প্রক্রিয়া হয়। তাতে ময়লা জিনিস বিলিন হয়ে যায় এবং কাপড়গুলো পরিষ্কার হয়।
    "সুস্বাস্থ্য আর পরিবেশ-সংরক্ষণের কথা বিবেচনা করে" এই ওয়াশিং মেশিন উদ্ভাবন করা হলো। ওয়াশিং পাউডারে অনেক রাসায়নিক পদার্থ আছে যা কাপড়ে জিইয়ে থাকলে মানুষের ত্বকে প্রক্রিয়া দেখা দিতে পারে। পাউডার ব্যবহারের পর ফেলে দেয়া পানিও পরিবেশ দূষিত করতে পারে।
    হাইয়ার কোম্পানির ৮টি বিভাগ চার বছরের প্রয়াসের পর এই নতুন ওয়াশিং মেশিন উদ্ভাবন করেন। তাতে ৩২টি পেটেন্ট প্রযুক্তি রয়েছে। চীনের জাতীয় গৃহ-ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির মান তত্ত্বাবধান ও পরীক্ষা কেন্দ্রের পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী, পাউডার ব্যবহার না করে এই ওয়াশিং মেশিনটির পরিচ্ছন্নতার হার হলো ৮৭.৫%, তা সাধারণ ওয়াশিং মেশিনের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি।
    গত বছর বাজারে তার বিক্রি শুরু হওয়ার পর ক্রমাগত ক্রেতাদের মধ্যে সমাদর পেয়েছে। পেইচিংয়ের একটি শপিং মলের বিক্রি বিভাগের পরিচালক রেন জেন হুয়া জানিয়েছেন, এই মলে বিক্রি হওয়া বিশেরও বেশি হাইয়ার ওয়াশিং মেশিনের মধ্যে এই পাউডার ব্যবহার না করার মেশিন বিক্রির কোটা প্রায় ২০ শতাংশ।
    "এর বিক্রির অবস্থা খুব ভাল। ক্রেতাদের মধ্যে গর্ভবতী নারীর সংখ্যা বেশী। তাদের বাচ্চাদের জন্য ওয়াশিং পাউডার ব্যবহার করতে চান না। তাই এই মেশিন তাদের কাজে লাগে।"
    ওয়াশিং মেশিন কেনার জন্যে আসা মিস্টার ইয়াং ছিং লিন বিক্রি কর্মীর ব্যাখ্যা শুনে এবং তার ওয়াশিং মেশিনের সামর্থ্য দেখে সঙ্গে সঙ্গে তা কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
    "এটা ভাল। তা ব্যবহার করে শুধু আমাদের পাউডার কেনার খরচ বাঁচানো যায় তা নয়, উপরন্তু দেশের পরিবেশ সুরক্ষার পক্ষেও হিতকর।"
    সবেক্ষত্র বিয়ে হওয়া মিস্টার জাং ইয়াং এক মাস আগে এরকম ওয়াশিং মেশিন কিনেছেন। তাতে তিনি খুব সন্তুষ্ট।
    "প্রথমে আমার সংশয় ছিলো, তা কি প্রচারের মতো ভাল? আমি ঠিক জানি না। পরে আমার একজন বন্ধুর প্রস্তাবে আমি কিনেছি। এক মাস ধরে তা ব্যবহার করেছি । বেশ ভালো। পাউডার ব্যবহার না করে কাপড়গুলো কিন্তু পরিষ্কার এবং কোনো রাসায়নিক পদার্থ কাপড়ে জিইয়ে থাকার ভয় নেই। আমাদের কিছু ভেতরের কাপড়ও তা দিয়ে ধোয়া যায়।"
    একটি নতুন হাইটেক পণ্য হিসেবে এই ওয়াশিং মেশিন মানুষের পুরোনো ধারণার পরিবর্তন করেছে। অথচ তার দাম প্রায় সাধারণ ওয়াশিং মেশিনের দিগুণ। বহু ক্রেতার মতে ৫০০০ ইউয়ান দিয়ে ওয়াশিং মেশিন কিনা দাম একটু বেশি হয়েছে।
    বস্তুত ওয়াশিং পাউডার ব্যবহার না করে, তা কেনার খরচ বেঁচেছে এবং ধোয়ার সময়ে পানি ও বিদ্যুতও বেঁচেছে। তাতে কেনার খরচ বেশি হলেও ব্যবহারের খরচ কম।
    এই নতুন মেশিন বিদেশীদের দৃষ্টিও আকর্ষণ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, নিউজিল্যান্ড, সিংগাপুর, জাপান, পাকিস্তান ও ভারত দশাধিক দেশ হাইয়ার গোষ্ঠীর কাছে মেশিন কেনার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। 

 

No comments:

Post a Comment