Sunday, May 6, 2012

অসহনীয় বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ও করণীয় সন্ধান

অসহনীয় বিদ্যুৎ পরিস্থিতি
ও করণীয় সন্ধান



শনিবার, ২৬ মে ২০১২
 
দেশে বিদ্যুতের লোডশেডিং এখন মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ফলে প্রচন্ড দাবদাহের এ সময়ে নাগরিকজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি বিদ্যুতের অভাবে দেশের শিল্প-কারখানাগুলোতে কমে গেছে উৎপাদন।  নতুন বিনিয়োগও অনাগ্রহী হচ্ছে বিনিয়োগকারীরা। এ অবস্থায় কর্মসংস্থানের পথ বন্ধ তো হচ্ছেই উপরন্তু লোকসানের শিকার হয়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে নানা শিল্প প্রতিষ্ঠান।
অসহ্য গরমের সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে মানুষ বিদ্যুৎ ও পানির দাবিতে মিছিল-মিটিং করছে। সরকার স্বল্প, ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানে চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতির কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হচ্ছে না। দুর্নীতিসহ নানা কারণেই বিদ্যুৎ খাতে কাঙ্ক্ষিত ফল দেখা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় সারাদেশে সৌর-বিদ্যুৎ উৎপাদনকে সহজীকরণের মাধ্যমে ব্যক্তি পর্যায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনকে উৎসাহিত করা দরকার। এতে বিদ্যুৎ চাহিদা অনেকটাই পূরণ করা সম্ভব হবে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন স্ট্রিট লাইটগুলোর জন্যে সৌর প্যানেল বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে কোটি টাকা সাশ্রয় হওয়ার পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ থাকবে নগর সড়কগুলোতে। ফলে, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতিসহ নানা অপরাধকর্মও কমে যাবে। সড়কে বিদ্যুৎ লোডশেডিংয়ের সুযোগে বেশিরভাগ ছিনতাই ঘটনা ঘটে থাকে। রাতের অন্ধকারে ছিনতাইকারীরা নিরীহ পথিককে সর্বস্বান্ত করে দেয়। ছিনতাই বিষয়ক নানা অনুসন্ধানী রিপোর্টেও বিষয়টি উঠে এসেছে। চসিকের সৌর প্যানেল বসানোর সিদ্ধান্তটি কার্যকর হলে বহুমাত্রিক ফল দেবে। দেশের অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও চসিকের উদাহরণটি গ্রহণ করলে সংশ্লিষ্ট এলাকার নাগরিক সাধারণ উপকৃত হবেন নিশ্চয়ই। প্রসঙ্গত, দেশের উত্তরবঙ্গসহ পশ্চাৎপদ অনেক এলাকায়, সেখানে বিদ্যুৎ সুবিধা এখনো পৌঁছেনি, সে সব অঞ্চলে সৌর বিদ্যুৎ গ্রামীণ জনগণের চাহিদা পূরণ করছে। মাত্র ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ করে সোলার প্যানেল বা সৌর চুল্লি বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে অনেকেই নিজেদের প্রয়োজন পূরণ করে গ্রামের সাধারণ মানুষদের মধ্যে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তা বিতরণ করছে। যার কারণে পশ্চাৎপদ অঞ্চলের সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারকারীরা শহরের জনগণের মতো অসহ্য লোডশেডিংয়ের শিকার হয় না। তবে উৎপাদন খরচ কমাতে সরকার উদ্যোগ নিলে ধনী-গরীব সকলেই এই বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবহারের সুযোগ পাবে। লোডশেডিংয়ের এই দুঃসহ সময়ে  শহর এবং দেশের গ্রামীণ জনপদগুলোতেও বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনে সাধারণ মানুষকে উৎসাহিত করা উচিত। কৌশলে বিদ্যুতের ব্যবহারকে জনপ্রিয় ও সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি সহজলভ্য করলে বিদ্যুতের জন্যে সরকারের উপর চাপ অনেকটাই কমে যাবে।
সাধারণভাবে কয়লা, পেট্রোল, গ্যাস এবং পানিকে বিদ্যুতের প্রথাগত উৎস বিবেচনা করা হয়। এর মধ্যে কয়লা, পেট্রোল এবং গ্যাসের মওজুদ সীমাবদ্ধ হওয়ার কারণে পশ্চিমা শিল্পপ্রধান দেশগুলো সে সব নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে যাচ্ছে।  ইরাক ও লিবিয়া দখলের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশ দুটোর তেল ও  গ্যাসসম্পদ নিয়ন্ত্রণ। তারা এখন নানা ছুঁতোয় মধ্যপ্রাচ্যসহ কয়লা, গ্যাস এবং পেট্রোল সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলো নিয়ন্ত্রণে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তারা সহজে জ্বালানি করায়ত্ত না করতে পারলে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের উসিলায় নগ্ন আগ্রাসন চালাচ্ছে দেশে দেশে। সাম্প্রতিক সময়ে পৃথিবীর নানা স্থানে সংঘটিত যুদ্ধগুলোর নেপথ্যের কারণ খুঁজলে এর সত্যতা প্রমাণিত হয়। আবার দরিদ্র দেশগুলোর বেশির ভাগেরই গ্যাস, কয়লা এবং পেট্রোল সম্পদ নেই। এ কারণে তাদের বিদ্যুৎ সংকটও  বেশি। এসব দেশ ব্যয়বহুল জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করে বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে চেষ্টা করে। কিন্তু তাতে চাহিদার সিকিভাগও পূরণ হয় না। জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে জটিলতার কথা চিন্তা করেই জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে মনোযোগ দিতে পরামর্শ দিচ্ছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশেরও মনোযোগ দেয়া উচিত।

No comments:

Post a Comment