Saturday, May 5, 2012

এনার্জি সেভিং বাল্ব : কমবে খরচ বাড়বে আলো

 এনার্জি সেভিং বাল্ব : কমবে খরচ বাড়বে আলো

সৌরভ রহমান ও মুনীর মম্তাজ
এনার্জি সেভিং বাল্ব। সময়ের আলোচিত একটি নাম। প্রকৃত নাম হলো কমপ্যাক্ট ফ্লোরোসেন্ট ল্যাম্প।  আর সংক্ষেপে বলা হয় সিএফএল। এই বাল্বগুলো সাধারণ বাল্বের থেকে একটু ভিন্নভাবে ডিজাইন করা। যার কারণে সাধারণ বাল্ব বা ইনক্যানডিসেন্ট ল্যাম্প এর থেকে কম পাওয়ার ব্যবহার করে। আর আলো দেয় সাধারণ বাল্বের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি।
এনার্জি সেভিং বাল্ব মূলত ঘন গ্যাস ভর্তি একটি টিউব। এই টিউব আলোর বিকিরণ গ্রহণ করে তাকে আবার আলোরূপে ফিরিয়ে দেয়। এর কারণে টিউবটি যে পরিমাণ আলো উৎপন্ন করে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি আলো পাওয়া যায়। গঠনগত দিক থেকেও এনার্জি সেভিং বাল্ব সাধারণ বাল্ব থেকে ভিন্ন। সাধারণত বাসা বাড়িতে ব্যবহারের জন্য ৬০ ওয়াট থেকে ১০০ ওয়াটের বিভিন্ন প্রকার সাধারণ বাল্ব ব্যবহার করা হয়। যার অর্থ হলো প্রতি ঘণ্টায় এই বাল্বগুলো ৬০ ওয়াট থেকে ১০০ ওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। কিন্তু সমপরিমাণ আলো পেতে এনার্জি সেভিংস বাল্বে বিদ্যুৎ খরচ হয় মাত্র ৯ থেকে ১১ ওয়াট।
কীভাবে কাজ করে
১৯৮০ সালের দিকে সিএফএল বা কমপ্যাক্ট ফ্লোরোসেন্ট ল্যাম্প পরিচিতি পায়। পরবর্তীতে এর  গুণগতমান আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করে বেশি আলো দেয়ার পেছনে এর গঠনগত পার্থক্য বিদ্যমান। আমরা যে কাচের টিউবটি দেখতে পাই তা পারদ বাষ্পে পূর্ণ থাকে এবং টিউবের মধ্যে থাকে ইলেক্ট্রনিক্স ব্যালাস্ট। যখন বৈদ্যুতিক সুইচ অন করা হয় তখন ব্যালাস্ট থেকে গ্যাসের মধ্য দিয়ে ইলেক্ট্রিক্যাল এনার্জি প্রবাহিত হয় ইলেক্ট্রিক্যাল তড়িৎ প্রবাহের রূপে এবং এটি আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি শোষণ করে। এই রশ্মি টিউবের ভেতর থেকে সাদা ফসফরাসকে উত্তেজিত করে এবং কোটিং থেকে তা দৃশ্যমান আলোতে পরিণত হয়। এ কারণে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হয় তার চেয়ে বেশি পরিমাণ আলো পাওয়া যায়।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের হার
সাধারণ বাল্ব ১০০ ওয়াট যে পরিমাণ আলো দেয় এনার্জি সেভিং বাল্বে সেই পরিমাণ আলো দিতে লাগে ২৩ ওয়াট বিদ্যুৎ শক্তি এবং ৬০ ওয়াটের বাল্ব যে আলো দেয় সমপরিমাণ আলো দিতে (সিএফএল) বাল্বের লাগে ১১ ওয়াট ও ৪০ ওয়াটের জায়গায় ৮ ওয়াট বিদ্যুৎ।
কীভাবে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে
ঢাকা শহরে বিদ্যুতের চাহিদা হলো প্রায় ১৫০০ মেগাওয়াট। মোট চাহিদার শতকরা ৭ ভাগ বিদ্যুৎ  ব্যবহৃত হচ্ছে বাসা-বাড়িতে এবং কমার্শিয়াল ক্ষেত্রে ল্যাম্পের জন্য।
লাইটের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয়
(১৫০০ দ্ধ ০.৭৭ মেগাওয়াট) = ১০৫ মেগাওয়াট।
যদি এনার্জি সেভিং ল্যাম্প ব্যবহার করা হয়, তাহলে বিদ্যুৎ কম খরচ হবে (১০৫দ্ধ০.৮ মেগাওয়াট) = ৮৪.০ মেগাওয়াট।
সুবিধাজনক ব্যবহার
এনার্জি সেভিং বাল্ব ব্যবহারের কতগুলো সুবিধা রয়েছে। আর সেগুলো হলোÑ এই বাল্বের আলো টিউব লাইটের আলোর মতোই। সাধারণ টিউব লাইটের ক্ষেত্রে দেখা যায়, যদি টিউব লাইটের কোনো সমস্যা হয় এটা হতে পারে টিউবের ক্ষেত্রে বা ব্যালাস্টের ক্ষেত্রে। তখন একজন ইলেক্ট্রিশিয়ানের প্রয়োজন হয় এবং এ জন্য বাড়তি খরচ হয়। কিন্তু এনার্জি সেভিং লাইটের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো সমস্যা নেই। এই বাল্ব নষ্ট হয়ে গেলে নিজেরাই প্রতিস্থাপন করা যায়। এ ছাড়াও এনার্জি সেভিং লাইট ব্যবহারের জন্য বিশেষ কোনো লাইট হোল্ডার বা ব্যালাস্টের প্রয়োজন নেই।
এনার্জি সেভিং লাইটের বড় সুবিধা হলো এটি কম ভোল্টেজেও আলো দেয়। কিন্তু টিউব লাইটের ক্ষেত্রে দেখা যায় ভোল্টেজ কম হলে আলো দেয় না।
এনার্জি সেভিং লাইটের দাম তুলনামূলকভাবে একটু বেশি হলেও সাধারণ বাল্বের তুলনায় দীর্ঘমেয়াদি এবং বেশি আলো দেয়ার কারণে একবার বেশি টাকা দিয়ে কিনলে আর ঝামেলা থাকে না। সাধারণ বাল্বের তুলনায় এর গড় আয়ু ৮ থেকে ১৫ গুণ পর্যন্ত বেশি। সিএফএল বাল্বের আয়ু ছয় হাজার থেকে ১৫ হাজার ঘণ্টা। যেখানে সাধারণ বাল্বের আয়ু সাড়ে সাত শ থেকে দেড় হাজার ঘণ্টা।
পরিবেশবান্ধব
আজকের বিশ্বের সব থেকে আলোচিত বিষয় পরিবেশ। দিন দিন পরিবর্তিত হচ্ছে বৈশ্বিক জলবায়ু। বাড়ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ। ঝুঁকির মুখে পৃথিবী। বিপন্ন মানুষের ভবিষ্যৎ। আর তাই দেশের শিল্প কল-কারখানায় দূষণ কমাতে আন্দোলন চলছে।
সাধারণত আমরা যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করি তা উৎপন্ন হয় জৈব জ্বালানি হতে। যেমন পেট্রোল, ডিজেল, কয়লা ইত্যাদি। এই জৈব জ্বালানি ব্যবহারের ফলে পৃথিবীজুড়ে প্রতিবছর বাতাসের সঙ্গে প্রায় ২৩০ মিলিয়ন টন বিষাক্ত গ্যাস কার্বন-ডাই-অক্সাইড যোগ হয়, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আমরা যদি পরিবেশবান্ধব বস্তু ব্যবহার করি তবে ওই ভয়াবহ বিপর্যয় হতে রক্ষা পাব। শুধুমাত্র এনার্জি সেভিং বাল্ব ব্যবহার করলে ২০ মিলিয়ন টন কম বিষাক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড বাতাসে ছড়াবে। সাধারণত বাতি ব্যবহারের ফলে মোট ব্যবহৃত বিদ্যুতের মাত্র ৫ ভাগ আলোতে রূপান্তরিত হয়। বাকি ৯৫ ভাগ বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয় তাপমাত্রা বাড়ানোর কাজে।
সরকার বিতরণ করবে বিনামূল্যে
বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে ঢাকা শহরের অফিস ও বাড়িতে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাল্ব ব্যবহারের নমুনা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ঢাকা শহরের অধিবাসীদের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাল্ব ব্যবহারে উৎসাহিত করতে বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত সাধারণ বাল্বের পরিবর্তে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাল্ব দেয়া হবে। ২০১০ সালের মার্চ মাসের মধ্যে ১০.৫ মিলিয়ন বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাল্ব বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। এতে ৩১২ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে প্রতিবছর যার মূল্য ১১.৫ মিলিয়ন ডলার। এই পরীক্ষামূলক প্রকল্পে রাজধানীর মৌচাক ও গুলবাগ এলাকায় ১০ হাজার পরিবারের মধ্যে এনার্জি সেভিং বাল্ব বিতরণ করা হবে।
গ্রামাঞ্চলেও দেয়া হবে
বিদ্যমান বিদ্যুৎ ঘাটতি নিরসনে আগামী সেচ মৌসুমের আগে গ্রাম ও শহর অঞ্চলে ২.৬৫ কোটি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাল্ব বিনামূল্যে বিতরণ করবে সরকার। সূত্র জানায়, সারাদেশে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাল্ব ব্যবহার করলে প্রতিবছর ৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। এই অতিরিক্ত বিদ্যুৎ পরবর্তী মৌসুমে কৃষকদের সরবরাহ করা হবে। এ প্রকল্পে সহায়তা করতে বিশ্বব্যাংক ৩৮ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে বলে জানা যায়।
প্রথম পর্যায়ে ১ কোটি পাঁচ লাখ ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ১ কোটি ৬০ লাখ বাল্ব আমদানি করা হবে। ইতোমধ্যে সরকার বাল্ব সংগ্রহের দরপত্র আহ্বান করেছে। যেখানে প্রথম পর্যায়ে ১৫ মিলিয়ন ডলারের ১ কোটি ১৫ লাখ বাল্ব আমদানির উল্লেখ আছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২৩ মিলিয়ন ডলারের ১ কোটি ৬০ লাখ বাল্বের দরপত্র আহ্বান করা হবে।
এ সমস্ত বাল্ব পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, পিডিবি (চউই), ডেস্কো (উঊঝঈঙ), ডিপিডিসি (উচউঈ) ও অন্যান্য সংস্থার মাধ্যমে ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে বিতরণ করা হবে। একটি পরিবার তাদের সর্বশেষ বিদ্যুৎ বিল দেখিয়ে সাধারণ বাল্বের পরিবর্তে দুটি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাল্ব সংগ্রহ করতে পারবে।
ব্যবহৃত হবে রাজপথে
ঢাকা শহরের বেশকিছু সড়ক থেকে সোডিয়াম বাতি খুলে সেখানে সংযোগ দেয়া হচ্ছে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বা ্এনার্জি সেভিং বাল্ব। প্রায় ৩০০ কোটি টাকা খরচ করে এই বাতিগুলো ঢাকা শহরের বিভিন্ন সড়কে লাগানো হবে। এ প্রকল্পের অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংক।
কাকরাইল মোড় থেকে হেয়ার রোড হয়ে শেরাটন ক্রসিং পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতি বা এনার্জি সেভিং বাল্ব লাগানো হয়েছে। বাংলামোটর ক্রসিং থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত, মিরপুর রোডের কয়েকটি অংশ, বনানী স্টাফ রোড (রেলক্রসিং) থেকে জোয়ারসাহারা পর্যন্ত ইতোমধ্যে ল্যাম্পপোস্ট থেকে সোডিয়াম বাতি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে রাজধানীর সব সোডিয়াম বাতি পরিবর্তন করা হবে। এতে প্রতিদিন প্রায় ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। প্রতিটি সোডিয়াম বাতি ৭০০ ওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন। সে ক্ষেত্রে একশ ওয়াটের একটি এনার্জি সেভিং বাল্ব লাগালে এর বিদ্যুৎ ব্যবহার সাত ভাগের এক ভাগে নেমে আসবে। অন্যদিকে এনার্জি সেভিং বাল্বের আলোর উজ্জ্বলতাও সোডিয়াম বাতির চেয়ে বেশি। সোডিয়াম বাতিতে ঘোলা আলোর বিকিরণ হয়। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতিতে স্বচ্ছ আলোর বিকিরণ হয়। সোডিয়াম বাতির স্থায়িত্ব ৬ থেকে ৯ মাস। অন্যদিকে এনার্জি সেভিং বাল্ব এক থেকে দুই বছর পর্যন্ত টিকে থাকে।
ব্যবহারে সতর্কতা
এনার্জি সেভিং বা কমপ্যাক্ট ফ্লোরোসেন্ট ল্যাম্ব ব্যবহারের কিছু শারীরিক অসুবিধা দেখা দিতে পারে। যেমন- যাদের মাথা ব্যথা, মাইগ্রেন বা এনপলেপির সমস্যা আছে তারা বাড়িতে কমপ্যাক্ট ফ্লোরোসেন্ট ল্যাম্প ব্যবহার করলে শারীরিক কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘ দিন এ আলোতে থাকলে মাইগ্রেন রোগীর মাইগ্রেন এ্যাটাক হতে পারে। মৃগী রোগীরা হঠাৎ এপিলেপিক এ্যাটাকে আক্রান্ত হতে পারেন। এ ছাড়া সুস্থ মানুষের ছোটখাটো মাথা ব্যথা, অবসাদ, বমি বমি ভাব বা মাথা ঘুরানো বোধ হতে পারে। এমনকি লুপাস রোগীরা এই আলোতে বেশিক্ষণ থাকলে শরীরে ব্যথা অনুভব করেন বলেও শোনা গেছে। এই অসুবিধাগুলো বেশি হয় পুরনো প্রযুক্তির বাল্বগুলোতে। তবে নতুন প্রযুক্তির বাল্বগুলোতে এই সমস্যা অনেক কমে গেছে।
এনার্জি সেভিং বাল্ব বা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতির পরিবেশগত কিছু অসুবিধাও আছে। ব্যবহারের পর এই বাল্ব যেখানে সেখানে ফেলা কিংবা সাধারণ পদ্ধতিতে ভাঙা উচিৎ নয়। এই বাল্বের ভেতরে যে গ্যাসীয় পদার্থ থাকে সেটি মাটিতে পড়লে তা ব্যাপক হারে মাটির উর্বরতা শক্তি হ্রাস করে। তাই নষ্ট বাল্ব ফেলার সময় খেয়াল রাখা উচিৎ। ইউরোপ আমেরিকাতে নষ্ট বাল্ব রিসাইকেল করার ব্যবস্থা থাকলেও এ ধরনের ব্যবস্থা আমাদের দেশে আজ পর্যন্তও গড়ে ওঠেনি।
বিভিন্ন ধরনের বাল্ব
বর্তমানে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে দেশি-বিদেশি বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের এনার্জি সেভিং লাইট। তার মধ্যে অন্যতম হলো ফিলিপস্ ট্রান্সটেক, সুপারস্টার, এনার্জিপ্যাক, হ্যাটস, ইয়ামা, রিয়া, ভরসা এবং ওএসএম ইত্যাদি। এগুলো ছাড়াও চায়না থেকে আমদানি করা নন ব্র্যান্ডের অনেক রকম প্যাঁচানো বাল্ব এনার্জি সেভিং লাইট নামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ব্র্যান্ড ও পাওয়ারের ওপর ভিত্তি করে এসব বাল্বের দামও ভিন্ন রকম হয়। বাজার ঘুরে দেখা গেছে ট্রান্সটেক এনার্জি সেভিং বাল্ব ২৩ ওয়াট বিক্রি হচ্ছে ২৯০ টাকা; ফিলিপস্ ২৩ ওয়াট ২৯৫ টাকা; সুপার স্টার ২৬ ওয়াট ২৮০ টাকা, ওএসএম ২৩ ওয়াট ২৭০ টাকা, ৩২ ওয়াট ৩০০ টাকা, ১৩ ওয়াট ২৩০ টাকা; রিয়া ৪৫ ওয়াট ৬০০ টাকা, ৩২ ওয়াট ২৭৫ টাকা, ২৬ ওয়াট ২৫০ টাকা, ২৩ ওয়াট ২৫০ টাকা; এনার্জি প্যাক ৬৫ ওয়াট ৮৮০ টাকা, ২৩ ওয়াট ২৪০ টাকা; হ্যাটস্ ৩২ ওয়াট ৩২০ টাকা, ২৬ ওয়াট ২৮০ টাকা; ইয়ামা ৩২ ওয়াট ২৯০ টাকা এবং ২৬ ওয়াট ২৬০ টাকা করে।
ধরা যাক, একটি বাসায় ১০০ ওয়াটের দুইটি বাল্ব, ৬০ ওয়াটের দুইটি বাল্ব এবং ৪০ ওয়াটের তিনটি বাল্ব ব্যবহার কার হয়। সে ক্ষেত্রে ওই বাসায় একদিনে মোট বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়Ñ
সাধারণ বাল্বের জন্য-
১০০ ওয়াটের বাল্বের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়
(১০০ দ্ধ ২ দ্ধ ৬) = ১২০০ ওয়াট ঘণ্টা
৬০ ওয়াটের বাল্বের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়
(৬০ দ্ধ ২ দ্ধ ৬) = ৭২০ ওয়াট ঘণ্টা
৪০ ওয়াটের বাল্বের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়
(৪০ দ্ধ ৩ দ্ধ ২) = ২৪০ ওয়াট ঘণ্টা
অর্থাৎ মোট ব্যবহার হয়
(১২০০ + ৭২০ + ২৪০) = ২১৬০ ওয়াট ঘণ্টা = ২.১৬ কিলোওয়াট ঘণ্টা
এক মাসে বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হবে
= ২.১৬ দ্ধ ৩০ = ৬৪.৮ কিলোওয়াট ঘণ্টা।
সে ক্ষেত্রে বাল্বের জন্য মাসিক বিদ্যুৎ বিল খরচ হচ্ছে
৬৪.৮ দ্ধ ৩.০৪ টাকা = ১৯৪.৯৯২ টাকা
এনার্জি সেভিং বাল্বের (সিএফএল) জন্য
২৩ ওয়াটের বাল্বের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়
(২৩ দ্ধ ২ দ্ধ ৬)= ২৭৬ ওয়াট ঘণ্টা
১১ ওয়াটের বাল্বের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়
(১১ দ্ধ ২ দ্ধ ৬)= ১৩২ ওয়াট ঘণ্টা
৮ ওয়াটের বাল্বের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়
(৮দ্ধ ৩ দ্ধ ২)= ৪৮ ওয়াট ঘণ্টা
অর্থাৎ মোট ব্যবহার হয়
(২৭৬ + ১৩২ + ৪৮) = ৪৫৬ ওয়াট ঘণ্টা= ০.৪৫৬ কিলোওয়াট ঘণ্টা
এক মাসে বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হবে
= ০.৪৫৬ দ্ধ ৩০ = ১৩.৬৮ কিলোওয়াট ঘণ্টা।
সে ক্ষেত্রে বাল্বের জন্য মাসিক বিদ্যুৎ বিল খরচ হচ্ছে
(১৩.৬৮ দ্ধ ৩.০৪ টাকা) = ৪১.৫৮৭২ টাকা
অর্থাৎ প্রতিমাসে খরচ বেঁচে যাচ্ছে (১৯৪.৯৯২-৪১.৫৮৭২ টাকা= ১৫৩.৪০৪৮ টাকা
প্রতিবছরে খরচ বেঁচে যাচ্ছে (১৫৩.৪০৪৮ টাকা দ্ধ১২) = ১৮৪০.৪৫৭৬ টাকা
‘সরকারের বাল্বগুলো দেশীয় উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে নেয়া উচিত’
নাফিজুল কাদিম
ন্যাশনাল মার্কেটিং ম্যানেজার, ডিস্ট্রিবিউশন, এসবিইউ
ট্রান্সকম ইলেক্ট্রনিক্স
সাপ্তাহিক : এনার্জি সেভিং বাল্ব প্রকৃতপক্ষে কি পরিমাণ বিদুৎ সাশ্রয় করে ?
নাফিজুল কাদিম : এনার্জি সেভিং বাল্ব এমনভাবে তৈরি করা যা সাধারণ লাইটের তুলনায় কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করে বেশি আলো দিতে সক্ষম। এ কারণে সাধারণ লাইটের সমপরিমাণ আলো পেতে কম বিদ্যুৎ ব্যয় হয়। যেমন- ১০০ ওয়াট বাল্ব যে আলো দেয় (সিএফএল) বাল্ব সেই পরিমাণ আলো দিতে পারে মাত্র ২৩ ওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। এ ক্ষেত্রে একটি এনার্জি সেভিং লাইট ব্যবহার করে ৭৭ ওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব।
সাপ্তাহিক : সারাদেশে শুধুমাত্র এনার্জি সেভিং লাইট ব্যবহার করে কি বিদ্যুতের সাশ্রয় করা সম্ভব?
নাফিজুল কাদিম : এনার্জি লাইটের ব্যবহার বিদ্যুতের সাশ্রয় করলেও সঠিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করতে না পারলে বরং বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়ে যেতে পারে। আজকাল অনেক তেল পাম্পে দেখা যায় তারা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য একটি টিউবলাইট খুলে একাধিক এনার্জি সেভিং লাইট (সিএফএল) ব্যবহার করছে। এতে হিসাব করে দেখা যাচ্ছে একটি টিউব লাইটে ৩৬ ওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয়। কিন্তু সেখানে ২৩ ওয়াটের দুটি এনার্জি সেভিং লাইট লাগালে ৪৬ ওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হচ্ছে। এভাবে এনার্জি সেভিং লাইটের ব্যবহার এনার্জি সেভের বদলে বেশি এনার্জি অপচয় করে। এ ক্ষেত্রে এনার্জি সেভ করার জন্য টিউব লাইটের ব্যবহার অব্যাহত রাখতে হবে।
সাপ্তাহিক : বাজারে যত প্রকার এনার্জি সেভিং লাইট পাওয়া যায় তার সবই কি গুণগতমানের ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী?
নাফিজুল কাদিম : বর্তমান সময়ে বাজারে নানা ধরনের এনার্জি সেভিং লাইট পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এ কথা নিশ্চিত করে বলা যাবে না যে সবই সমান কার্যকরী এবং সব প্যাচ লাগানো বাল্বই এনার্জি সেভ করে। বর্তমানে চায়না থেকে অনেক নিম্নমানের এনার্জি সেভিং বাল্ব আমদানি করা হচ্ছে যা সাধারণ বাল্বের চেয়েও বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে এবং অল্পদিনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেকেই এ ধরনের বাল্ব কম টাকায় কিনে ব্যবহারের পর এনার্জি সেভিং লাইটের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে।
সাপ্তাহিক : বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাল্ব বিনামূল্যে বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ ব্যাপারে আপনার মতামত কি?
নাফিজুল কাদিম : এটি সরকারের একটি ভালো সিদ্ধান্ত। তবে সরকারের উচিত ছিল বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাল্বগুলো বিদেশ থেকে আমদানি না করে দেশীয় উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে নেয়া। এর ফলে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হতো। নতুন নতুন অনেক কারখানাও গড়ে উঠত। দেশের অর্থনীতি আরো চাঙ্গা হতো। কিন্তু বিদেশ থেকে আমদানি করার কারণে বর্তমানে যে দেশীয় শিল্প আছে সেটা ধ্বংস হবে। 

No comments:

Post a Comment